মাশরুপ একটি পুষ্টিকর সবজি। এটি নিম্নশ্র্রেণির ছত্রাক জাতীয় পরজীবী উদ্ভিদ। জীবন ধারণের জন্য এরা জৈবিক বস্তু থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে।
বিগত আশির দশকের দিকে মাশরুম বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হলেও উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় এই প্রথমবারের মতো মেহেরুন নেছার নামের এক নারী উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে শুরু করেছেন মাশরুম চাষ। এতে করে অল্পদিনে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানা গেছে, উদ্যোক্তা মেহেরুন নেছার বাড়ি বিরামপুর পৌরশহরের মির্জাপুর এলাকায়। স্বামী মো. জামিনুল ইসলাম সুমন। চার মাস আগে নিজ বাড়িতে পরিত্যক্ত তিনটি ঘরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মাশরুম চাষ। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তার মাশরুম চাষ এলাকায় সাড়া জাগায়। এর মধ্যে তার মাশরুম বিরামপুর উপজেলাসহ আশপাশের বেশ কিছু উপজেলায় অনলাইনে বিক্রয় শুরু করেছেন। তার মাশরুম প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ফোর এস অ্যাগ্রো লিমিটেড।
মাশরুম চাষ প্রকল্পের কার্যলয়সূত্রে জানা যায়, গত বছর নভেম্বরে জেলা হটিকালচারাল অফিস থেকে ১০ হাজার টাকায় ১৮৩টি মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে এনে সাড়ে ৪ শ পিস সিলিন্ডার তৈরি করে মাশরুম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ওই প্রকল্প থেকে গড়ে সপ্তাহে ১২ কেজি মাশরুম উৎপন্ন হয়। প্রতিকেজি মাশরুম কাঁচা-২০০টাকা, শুকনো ১৫ শ এবং গুঁড়া মাশরুম ৩ হাজার টাকা কেজি বিক্রয় করা হয়।
শনিবার দুপুরে ওই প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা শহরের মির্জাপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে টিনশেড একটি বাড়ি। বাড়ির ভেতরে তিনটি কক্ষে সারি সারি ভারে ঝুলানো মাশরুমের উপকরণ। মাশরুম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পলিথিনে বাঁধানো খড়ের ভেরত মাদার মাশরুম, হাইগ্রোমিটার স্পেয়ার। দড়ি, বদ্ধ ঘর, রাবার ব্যান্ড; এ ছাড়াও মাশরুম চাষের জন্য তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় ২০-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুধু মাশরুম নয়, এই প্রকল্পের পাশাপাশি করেছেন কবুতরের খামার। খামারে লাল, কালো মুক্ষী, ঘিয়াচুলি ভারতীয়, গিরি বাজ ঢাকা, রাজশাহী, কাগজি গিরিবাজ কবুতর আছে। এ ছাড়াও মাক্সী ও সবজী জাতের রেসার কবুতর আছে। ওই খামারে অন্য একটি কক্ষে আছে ২ শ দেশি মুরগি।
মেহেরুন নেছা বলেন, আমার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্বামী জামিনুল ইসলাম সুমনের সহযোগিতায় আমার বসতবাড়ি মির্জাপুর গ্রামে অনেকটা শখের বসেই কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হই। এতে আমার স্বামী ও ছেলে সহযোগিতা করে। প্রতিমাসে প্রায় ৫০ কেজির মতো মাশরুম উত্তোলোন হচ্ছে। এতে প্রতিমাসে এখন ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিকেজি মাশরুম উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আর কাঁচা ২ শ, শুকনো ১৫ শ এবং গুঁড়া ৩ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিরামপুরে মাশরুমের চাহিদা কম, বিরামপুর শহর ছাড়াও ফুলবাড়ি, ঘোড়াঘাট ও ঢাকায় যাচ্ছে মাশরুম। মাশরুম সম্পূর্ণ হালাল, পুস্টিকর, সুস্বাধু ও ওষধি গুণসম্পন্ন সবজি যা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শাহারিয়ার ফেরদৌস হিমেল বলেন, মাশরুম শরীরের জন্য উপকারী। এটা নিয়মিত খেলে কোলেস্টেরল মুক্ত হয়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক ও নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে। মাশরুম খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মা ও শিশুদের জন্য আদর্শ খাবার। মাশরুমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এর মধ্যে কোনো চর্বি নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিক্সন চন্দ্র পাল জানান, মাশরুম চাষে জায়গা অনেক কম লাগে। সময় কম লাগে। এটাতে বেশ লাভজনক। মাশরুম একটি সুস্বাদু সবজি। এটা চাষে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
সানবিডি/এনজে