মহামারি করোনার সংক্রমণের প্রথম দিকে ফুল ধস নামলেও বর্তমানে বাজার জমে উঠেছে।প্রায় দুই বছর পর হাসি ফুটেছে ফুল চাষিদের মুখে। আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। একদিন পর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও নানা অনুষ্ঠানে ফুলের বাড়তি চাহিদা থাকে। এই চাহিদার সিংহভাগ জোগান দেন কালীগঞ্জের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এবারও বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কালীগঞ্জের ফুলের সুবাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় কালীগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী এসএম টিপু সুলতান ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। তার বাগানে রয়েছে গোলাপ, জারবেরা ও চন্দ্রমল্লিকা। এরই মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন টিপু সুলতান। সেই সঙ্গে লক্ষাধিক টাকার জারবেরা ও চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি করেছেন।
টিপু সুলতান বলেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুলের ব্যবসা জমজমাট থাকে। এই সময় ফুলের দাম ভালো পাওয়া যায়। পাইকারিতে একটি লিলিয়াম ফুল ১০০ টাকা, জারবেরা ৫-১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬-৭ টাকা ও গোলাপ ১০ টাকা বিক্রি করি। তবে চাহিদা বুঝে দাম বাড়ানো হয়। বিশেষ করে দিবসগুলোতে ফুলের চাহিদা ও দাম বাড়ে। ফুল ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে পাইকারিতে ফুল কেনেন। এসব ফুল প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সাত লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে বলে আশা করছি।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, জেলার প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়। তবে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ফুলের আবাদ কমেছে। চলতি বছর প্রায় ২১৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুলের আবাদ হয়েছে।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক চাষি উৎপাদিত ফুল নিয়ে ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত পরিবহনযোগে বাজারে আসছেন। বিকাল পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ফুলে ভরে যায়।
ফুল চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করেন। প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা ও অন্যান্য দিবসে ফুলের বাড়তি চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো। চাষিরা চুক্তি অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের ফুলের আড়তে ফুল পাঠিয়ে দেন। ফলে টাকা খরচ করে ফুল বিক্রির জন্য কোথাও যাওয়া লাগে না চাষিদের। তারা মোবাইল ফোনে দাম ঠিকঠাক করে ফুল পাঠিয়ে দেন।
সানবিডি/এনজে