পুঁজিবাজার থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদন শুরু হবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি।
কোম্পানিটির আইপিও সাবস্ক্রিপশন চলবে আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটির আইপিওতে কেবল তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন, যে সকল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নূন্যতম বিনিয়োগ ২০ হাজার টাকা থাকবে।
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি বিকাল ৫টা থেকে ১২ জানুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের বিডিং (নিলাম) অনুষ্ঠিত হয়। নিলামের মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিয়ম মেনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে নির্ধারিত কাট-অফ প্রাইসের চেয়ে ২০ শতাংশ কম মূল্যে শেয়ার বিক্রি করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২০ টাকা দামে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ শেয়ার বিক্রি করে ৫২ কোটি ৯৪ লাখ ১২ হাজার টাকা সংগ্রহ করবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন- বিএসইসি-এর ৭৯৯তম সভায় জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এর ফলে বুকবিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।
পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা টাকা অবকাঠামো ও অন্যান্য নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা, ভূমি উন্নয়ন, ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর খরচ মেটাতে ব্যবহার করবে কোম্পানিটি। ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখে সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ২৯ টাকা ৯৯ পয়সা। পুনঃমূল্যায়ন ছাড়া নিট সম্পদ মূল্য ২৭ টাকা ৭৮ পয়সা।
উল্লেখ্য, বুকবিল্ডিং পদ্ধতির আইপিও অনুমোদনের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোড শো আয়োজন করে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। এটি দক্ষিণ কোরিয়া আর বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতা ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালীন সময়ে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডে উৎপাদিত অটো ডিসেবল সিরিঞ্জের কাঁচামাল, ইনসুলিন সিরিঞ্জের উপাদান, আইভি ক্যানুলা, স্কাল্প ভেইন সেট, বুরেট সেট, ইনফিউশন সেট, ব্লাড ব্যাগ, ল্যাটেক্স সার্জিক্যাল গ্লাভস, কেএন নায়েন্টিফাইভ মাস্ক, সার্জিক্যাল ফেস মাস্ক, নেলাটন ক্যাথেটার, ফিডিং টিউব, পাকস্থলীর টিউব, টিউব দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক, অক্সিজেন নাসাল ক্যানুলা, সার্জিকাল ব্লেড, ল্যাটেক্স পরীক্ষার গ্লাভস, রক্ত সংগ্রহের জন্য সুই, প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট, আম্বিলিক্যাল কর্ড ক্ল্যাম্প, ব্যান্ডেজ, আম্বিলিক্যাল কর্ড ক্ল্যাম্প, এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব, প্রাথমিক চিকিত্সার বাক্স, অ্যালকোহল প্যাড, নিরাপত্তা বক্স, অটোক্লেভ, ব্রেস্ট পাম্প সরবরাহ হয়েছে দেশ-বিদেশের বাজারে।
তাঁরা আরও জানান, করোনায় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় দিন-রাত কাজ করেছে জেএমআই গ্রুপ। সরকারকে মাস্ক-গ্লোভস সরবরাহ করেছে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কেএন নায়েন্টিফাইভ মাস্ক উৎপাদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়াও সারা দেশে কিডনি রোগীদের সেবায় ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রাজ্জাক। এরইমধ্যে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। পাশাপাশি সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন এবং নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালেও ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে।