মহামারি করোনাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের তৈরি পোশক গত ডিসেম্বর মাসে রপ্তানিতে ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এ সময় ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি উচ্চমূল্যের পোশাকেরও কদর বাড়ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাঁরা মনে করেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা চীন ও ভিয়েতনামের বিকল্প গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে।
ফলে বিশ্বের বড় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মৌলিক পোশাক তৈরির পাশাপাশি উচ্চমূল্যের পোশাক সোর্সিং করছে এখন বাংলাদেশ থেকে। তাঁদের মতে, দেশের মোট পোশাক রপ্তানিতে উচ্চমূল্যের পোশাকের রপ্তানি পাঁচ ভাগের এক ভাগ। পোশাক খাতের প্রতি আস্থা বেড়েছে বৈশ্বিক ক্রেতাদের। তাদের আশা, আগামী এক দশক এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
দেশের উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানিকারকদের অন্যতম বড় উদ্যোক্তা এজেআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ জলিল অনন্ত (অনন্ত জলিল) বলেন, ‘দেশে উচ্চমূল্যের পোশাকের কার্যাদেশ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। একসময় আমার কারখানা থেকে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি হলেও সম্প্রতি তা বেড়ে প্রায় ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ’ এখন পর্যন্ত তাঁর কারখানায় বিপুল কার্যাদেশ রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভারত ও ভিয়েতনামে করোনায় কারখানা বন্ধ থাকায় ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম ও চীন থেকে যেসব বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান উচ্চমূল্যে পোশাক আমদানি করত, সেসব ক্রেতা এখন বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিচ্ছে। আমার আশা, আগামী ১০ বছর দেশের পোশাক খাতের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ’ তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী বিশ্ববাজারে দেশের মৌলিক পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি অনেক বেড়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে লন্জারি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১২৩ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৮.৭০ শতাংশ বেশি। স্যুট থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ১২.৪৩ শতাংশ। জ্যাকেট রপ্তানিতে আয় ৪৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১৭ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৩৪ কোটি ডলারের সমমূল্যের আনোরাক (পশম ও চামড়ার তৈরি বিশেষ জ্যাকেট) রপ্তানি করেছে, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আরো যেসব উচ্চমূল্য সংযোজনকারী পণ্যে বিনিয়োগ বাড়ছে তার মধ্যে রয়েছে স্পোর্টসওয়্যার, আউটারওয়্যার, ইউনিফর্ম ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানিতে আগের বিচারে উচ্চমূল্য সংযোজনকারী পণ্যের শেয়ার মাত্র ২০ শতাংশ। আর উচ্চমূল্য সংযোজনকারী পণ্যের বেশির ভাগই নন-কটনজাতীয়। বিশ্ববাজারে মোট পোশাক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশই নন-কটন, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা মাত্র ২৫ শতাংশ। ’
সানবিডি/এনজে