ভারতে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে দেশটির ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী চিত্রা রামকৃষ্ণা হিমালয়ের এক আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। তাকে নানান তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরু পরামর্শ নিতেন। নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো ওই যোগীর পরামর্শেই। এর বাইরেও, আর্থিক প্রাক্কলন, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং বোর্ডের এজেন্ডাসহ শেয়ারবাজারের সব তথ্য ওই গুরুকে জানাতেন চিত্রা রামকৃষ্ণা।
তবে, ২০১৬ সালেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এনএসই ছাড়েন চিত্রা। তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রমাণ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এদিকে, ত্রুটিপূর্ণ করপোরেট গভর্ন্যান্সের কারণে কয়েক বছর ধরে এনএসইর লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। এক্সচেঞ্জটি ২০১৭ সালে আইপিও ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কর্মকর্তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে তা আটকে যায়।
তিন বছর তদন্ত শেষে ওই এক্সচেঞ্জকে ৯ কোটি ডলারের বেশি জরিমানা করেছে এবং ছয় মাসের জন্য শেয়ার বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করেছে। তবে এনএসই এই আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং নতুন আইপিও ফাইল করার জন্য অনুমোদন চেয়েছে।
তদন্ত চলাকালে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে চিত্রা রামকৃষ্ণার ইমেইল চালাচালির নথি পাওয়া যায়। ওই সময় জিজ্ঞাসাবাদে চিত্রা বলেছিলেন, গুরু তার কাছে আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস ছিলেন। তার কাছ থেকে ২০ বছর ধরে দিক নির্দেশনা নিয়ে আসছেন তিনি।
তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা গোপনীয়তা বা সততার সঙ্গে আপস বলে গণ্য হতে পারে না। তবে, লভ্যাংশ ও পে-আউট অনুপাত, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং এনএসই কর্মীদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের মতো সংবেদনশীল তথ্য গুরুর সঙ্গে শেয়ার করা ক্ষতিকর কিছু নয় বলে চিত্রা যে দাবি করেছেন তাকে ‘অবাস্তব’ বলছে তদন্তকারী সংস্থা।
তদন্তে দেখা গেছে, ওই আধ্যাত্মিক গুরু মধ্যস্তরের এক নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব রেখেছিলেন। পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই সরাসরি চিত্রার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এনএসই'র বেশির ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি বেতনও পেতেন তিনি। যদিও এ সম্পর্কিত যথেষ্ট নথিপত্র ছিল না। চিত্রা বিষয়টি অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে চালিয়ে নিয়েছেন।
তদন্তে দেখা গেছে, ওই গুরুই এক্সচেঞ্জ চালাচ্ছিলেন আর চিত্রা ছিলেন নিছক তার হাতের পুতুল।
এছাড়াও, এনএসই এবং বোর্ড ওই যোগীর সঙ্গে গোপনীয় তথ্যের আদান-প্রদান সম্পর্কে জানত। কিন্তু তারা বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। এ কারণে এনএসইকে দুই কোটি ৭০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে এবং ছয় মাসের জন্য এক্সচেঞ্জকে কোনো নতুন প্রোডাক্ট আনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চিত্রা রামকৃষ্ণাকে ৩ কোটি রুপি জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি, তিন বছরের জন্য কোনো শেয়ার ও সেবিতে নিবন্ধিত ব্রোকারদের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে এনএসইর যাত্রা শুরু হয়। নির্বাহীদের যে দলটি এ স্টক এক্সচেঞ্জের হর্তাকর্তা ছিলেন চিত্রা রামকৃষ্ণা অন্যতম। তখন বিএসই লিমিটেডের (তৎকালীন বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে এ স্টক এক্সচেঞ্জ। ২০০৯ সালে চিত্রা এনএসইর যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হন।
সানবিডি/এনজে