তাদের ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসাটাই যেন অনেকের কাছে বিস্ময়ের। আর প্রতিটা ধাপেই সেই বিস্ময়কে আর এক সুর উঁচুতে বাঁধছেন ক্যারিবীয় যুবারা। জিম্বাবুয়ের কাছে হারতে হারতে ‘বিতর্কিত’ মানকাড আউটে নকআউট পর্বে ওঠে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ ফাইনালেও দুর্দান্ত বোলিং করেছে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপটাকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। মাত্র ১৪৫ রানে অলআউট ভারত!
যুব বিশ্বকাপের ১১ আসরের ফাইনালে প্রথমে ব্যাটিং করে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানের স্কোর। ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতেরই বিপক্ষে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট হয়েছিল পাকিস্তান। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তবুও কিন্তু ম্যাচটি জিততে পারেনি ভারত। সেই কষ্টের স্মৃতিই এবার তাঁদের জন্য হতে পারে প্রেরণা। ১০৯ করেও যদি ম্যাচ জেতা যায়, ১৪৫ করে কেন নয়?
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সরফরাজ খানই যা একটু লড়ছেন। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৮৯ বলে করেছেন ৫১। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের বাকি পাঁচজন মিলে করেছেন ২০! দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ এসেছে নয়ে নামা বাথামের ব্যাটে। ভারতের আট ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন জোপেস আর জন।
প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী বোলার জোসেপই। মাত্র ১৯ বলের মধ্যে ভারতের প্রথম তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন। এই ধাক্কা আর ভারত সামলাতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে হারাতে ৫০ রানের মধ্যেই অর্ধেক ব্যাটসম্যান হারিয়ে ফেলেছিল তারা। তবু যে এক শর নিচে অলআউট হতে হয়নি, সেটি পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের কারণেই।
অথচ বিশ্বকাপের আগেও বাংলাদেশের কাছে তিন ম্যাচ সিরিজে ধবল ধোলাই হয়েছিল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই। উপমহাদেশীয় কন্ডিশন যেন দুর্বোধ্য এক ধাঁধা হয়ে এসেছিল তাঁদের কাছে। গ্রুপ পর্বে দুই শক্ত প্রতিপক্ষের ম্যাচেও সাবলীল ছিল না। জেতার জন্য শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের ১ উইকেটে ৩ রান লাগে, এমন পরিস্থিতিতে বল না করেই আউট (মানকাড) করে কোয়ার্টার ফাইনাল।
সেখান থেকেই যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বদলে যাওয়া শুরু। প্রথমে পাকিস্তানকে হারিয়ে এক যুগ আগের বদলা নিল। ২০০৪ সালে এই বাংলাদেশে আয়োজিত যুব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল তারা। সেবার হারতে হয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় দুই ফেবারিটের একটি। এবার বাংলাদেশকেও বোলিং দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়ে ফাইনালে।
ফাইনালে ভারত, যাদের কাছে শ্রীলঙ্কা আর নামিবিয়ার কোনো পার্থক্য নেই বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসা ক্যারিবীয় অধিনায়ক হেটমায়ার গতকাল খুব সত্যি একটা কথা বলেছেন, বাংলাদেশও কিন্তু অপরাজিত থেকেই মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ক্রিকেটে নির্দিষ্ট দিনে যে ভালো খেলে, সেই ফেবারিট।
আজ যেন শুরু থেকে সেটাই প্রমাণ করার প্রতিজ্ঞায় তারা। সাত সকালেই আগুন ঝরালেন জোসেপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উদ্বোধনী বোলারের তোপে ম্যাচের ৬.১ ওভারেই ভারতের তিন উইকেট নেই! ৭ রান করে ফিরলেন ওয়াশিংটন সুন্দরও, জনের শিকার হয়ে। ৫ রান করে ফিরেছেন জাফরও। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়ে ভারত শেষ চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু একপ্রান্ত থেকে দুর্দান্ত বোলিং করেও উইকেটের দেখা না পাওয়া হোল্ডার অবশেষে প্রাপ্য পুরস্কার পেতেই ভেঙেছে সেই জুটি। জোসেপ ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি রেট চারেরও নিজে। তবু তিনিই সবচেয়ে ‘খরুচে’! জন ৩ উইকেট নিয়েছেন ৩৮ রান দিয়ে। হোল্ডার ১০ ওভারে দিয়েছেন ২০ রান দিয়ে ১ উইকেট। ইকোনমি রেট ২! স্প্রিংগার প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে ৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৯ ওভারে ২৪ রান। প্রথম চার বোলারের কারণে সুযোগই পাচ্ছিলেন না কিমো পল। শেষ পর্যন্ত আক্রমণে এসে ভারতের ইনিংসটা তিনিই মুড়ে দিয়েছেন ১৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো