১৪ ফেব্রুয়ারী। একদল ব্যস্ত হয়ে গেছে প্রকাশ্যে চুমু খেতে- আরেকদল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সোহরাওর্দীতে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে। ফেব্রুয়ারী জুড়েই অনলাইন পাড়ায় বেশ উন্মাদনা ভালোবাসা দিবস নিয়ে। আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে আবার তিন দিনের কর্মসূচী নিয়েছে। "ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড" সহ জুয়েলারী, পোশাক এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারে এনেছে "ভালোবাসা দিবসের স্পেশাল কালেকশান"।
১৯৯৩ সালে শফিক রেহমান ভালোবাসা দিবস পালনের যে যাত্রা শুরু করেছিল- সেই ভালোবাসার গাড়িতে আজ প্রজন্ম উন্মাদ হয়ে হয়ে গেছে। "কাছে আসার সাহসী গল্পে"র জনপ্রিয়তা এতই বেড়ে চলছে আমরা ভুলে যাচ্ছি জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীদের সাহসী গল্প।
১৪ ফেব্রুয়ারী,১৯৮৩। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ছাত্র জমায়েত। মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী ছাত্রনেতা মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে সেই বিশাল জমায়েতে পুলিশের প্রথম বুলেট এসে লাগে জয়নালের গায়ে- ক্ষান্ত হয়নি এরশাদের পুলিশ, বেয়ুনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয় জয়নালকে; শিশু দিপালীকে হত্যা করে গুম করা হয় দিপালীর লাশ।
সারাদিনই চলে ছাত্রদের উপর নির্যাতন। হাজার হাজার ছাত্রদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ তুলে দেয় আর্মিদের হাতে। আর্মিদের হাতে অমানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয় ছাত্ররা। দিনব্যাপি সেই এরশাদের পুলিশ-আর্মি-বিডিআর এর হাতে আরও মারা যায় জাফর, কাঞ্চন, ফারুকসহ আরও ১০ জন। সেই ১৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ লাল হয়েছিল রক্তে- গণমূখী শিক্ষার দাবিতে- গণতন্ত্রের দাবিতে... আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী "আমি-তুমি" দিবসে পালন হয়; সমগ্র জনতার মুক্তির লক্ষ্যে যারা প্রাণ দিয়ে গেল ;
কই তাদের কথা স্মরণ করেতো টিভি চ্যানেলগুলোতে কোন একটা প্রোগ্রামের তেমন আয়োজন দেখিনা- চলে "কাছে আসার সাহসী গল্প-১,২,৩" দিপালী-জয়নাল-ফারুখ-কাঞ্চনদের সাহসী গল্পের কথা প্রজন্ম ভুলে গেছে... জয়নালদের গল্পে শাসকদের বড় ভয়, দীপালিদের গল্পে শফিক রেহমানদের বড় ভয়, ফারুখদের গল্পে সাম্রজ্যবাদীদের চামচাদের বড় ভয়, কাঞ্চনদের গল্পে দুঃশাসনের পিঠে বসা রাজা-মন্ত্রী-উজিরদের বড় ভয়।
এ প্রজন্মকে অরাজনৈতিক করার-অধিকার অসচেতন করার জন্যে, ছাত্রপ্রতিরোধের চেতনাকে চাপা রাখার জন্যে প্রজন্মকে শাসক-পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী সবাইমিলে বানালো ভালোবাসা দিবস পালনের ধারক-বাহক। এই আমি-তুমির ভালোবাসা দিবস নিপাত যাক। শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো জাফর, দীপালি,কাঞ্চন, জয়নাল,ফারুখদের প্রতি।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর নিজস্ব। www.sunbd24.com এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে www.sunbd2424.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।