মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ক্রমাগত প্রবৃদ্ধিতে এখনই চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই সময়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রয়োজন কারিগরি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। বৃহৎ শিল্পায়নে জাপান ও তার বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে সিসিসিআই-জাপান ডেস্কের আয়োজনে এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে জেটরো’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইওজি আন্দো, চিটাগাং চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী, সিসিসিআই-জাপান ডেস্কের নলেজ পার্টনার নিউ ভিশন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক রাফি ভূঁইয়া ও সিসিসিআই-জাপান ডেস্কের অপারেটিং পার্টনার লিগ্যাল কনসাল’র ম্যানেজিং পার্টনার ব্যারিস্টার ওমর এইচ খান বক্তব্য রাখেন।
ওয়েবিনারে প্রায় ১০০ এর অধিক জাপানি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম স্বাগত বক্তব্যে জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে যুবশক্তি এবং সে শক্তি কাজে লাগানোর জন্য জাপানের রয়েছে মূলধন ও বিনিয়োগ। পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা মেটানোর মত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও জাপানের আছে। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রপ্তানি বাজারকে লক্ষ্য করে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদেরকে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেকোন তথ্যের জন্য সিসিসিআই-জাপান ডেস্ক-এ যোগাযোগের অনুরোধ জানান।
জেটরো’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইওজি আন্দো সিসিসিআই-জাপান ডেস্ক এবং বাংলাদেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামে যে চমৎকার অর্থনৈতিক অবস্থা বিদ্যমান, চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে পরিণত হওয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, লিগ্যাল কাউন্সেল, নিউ ভিশন সলিউশন লি., বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স এবং জেটরো’র সমন্বয়ে জাপান ডেস্ক আইনগত পরামর্শ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাজার সম্পর্কিত তথ্য প্রদান, সংযোগ স্থাপন ও পলিসি এডভোকেসির মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করবে।
চিটাগাং চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর তথ্যচিত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ভূমিবেষ্টিত দক্ষিণ এশিয়ার সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ যেমন : থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশের প্রায় ৬০ কোটি জনগোষ্ঠীর কেন্দ্রে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গ্রোথ ইঞ্জিন হিসেবে রূপান্তরিত হচ্ছে। চট্টগ্রামকে ‘দি সিক্রেট অপরচ্যুনিটি অব এশিয়া’ উল্লেখ করে তিনি সিসিসিআই জাপান ডেস্কের মাধ্যমে আগত জাপানি বিনিয়োগকারীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সিসিসিআই জাপান ডেস্কের নলেজ পার্টনার নিউ ভিশন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক রাফি ভূঁইয়া বাংলাদেশের মার্কেট ইনসাইট এবং দশটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ খাতের ওপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।
তিনি কৃষিজাত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ব্লু ইকনোমি, ইলেক্ট্রনিক, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, স্বাস্থ্য সেবা, মেডিকেল ডিভাইস, আইসিটি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
সিসিসিআই জাপান ডেস্কের অপারেটিং পার্টনার লিগ্যাল কনসাল’র ম্যানেজিং পার্টনার ব্যারিস্টার ওমর এইচ খান ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
তিনি বাংলাদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ সুযোগসমূহ কাজে লাগাতে জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশে জাপানিদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে লিগ্যাল কাউন্সেল’র পক্ষ থেকে অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন ব্যারিস্টার ওমর এইচ খান।
জেবিসিসিআই’র সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপনসূচক বক্তব্যে বলেন, সিসিসিআই জাপান ডেস্ক উন্নয়নশীল এবং উন্নত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যোগাযোগ, বিনিয়োগ এবং ম্যাচ মেকিং এ উন্নয়ন সহায়ক হিসেবে সহযোগিতা করতে পারে। তিনি সিসিসিআই, জেটরো এবং জেবিসিসিআই’র সমন্বিত প্রয়াসের প্রশংসাপূর্বক বক্তাদের সারগর্ভ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এএ