দ্রব্যমূল্য: মধ্যবিত্তের বোবাকান্না

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২২-০২-১৮ ১৭:৩৭:০৭


বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে এখন মানুষ চোখে সর্ষেফুল দেখার মত অবস্থা। সাধারণ আয় বা মধ্যবিত্তের জন্য জীবনযাপন তাদের প্রচলিত ছন্দে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। মানুষ আছে ত্রিশঙ্কু অবস্থায়। দিন দিন বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, কিন্তু বাড়ছে না উপার্জন। তার মানে উচ্চমধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত সবার অবনমন হচ্ছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্দশার প্রকট চিত্র হয়ে ওঠে সেদেশের মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে।

দৈনিক বাজার করতে আসা একজন বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তার বাসাভাড়া ৫০০ টাকা বেড়েছে। সন্তানের স্কুলে যাওয়া আসার জন্য দিনে রিকশাভাড়া লাগত ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। এখন হয়েছে ৬০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সব পণ্যের দামই বাড়তি। অফিসে যাওয়া আসা করতেও বাসভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। কিন্তু তার আয় দুই বছর আগে যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। সংসার চালাতে এখন প্রতি মাসেই ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে।

টিসিবি বাজারদর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়: মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। মধ্যম আয়ের পাঁচজনের একটি পরিবারে গড়ে ৫ লিটার সয়াবিন তেল লাগে। টিসিবির হিসাবে, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৬৫ থেকে ৫১০ টাকা, এখন সেটি ৭৪০ থেকে ৭৮০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেল কিনতে একটি পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। তবে বিগত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, ফার্মে উৎপাদিত মুরগির দাম বছরজুড়েই বেশি থাকছে। যেমন ব্রয়লার মুরগির দাম এখন বছরের বেশির ভাগ সময় প্রতি কেজি ১৫০ টাকার বেশি থাকে। করোনার আগেও এই দর ১৩০ টাকার আশপাশে থাকত। বিক্রেতাদের দাবি, মুরগির বাচ্চা, খাবারের দাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই আর আগের দামে ফেরার আশা কম।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ১৮টি সবজির দাম বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ২০২০ সালে সবজির দাম গড়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের হিসাবটি তারা এখনও তৈরি করেননি। ক্যাবের কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বাজার ঘুরে নিয়মিত দামের তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন: প্রতিবছর ভরা শীত মৌসুমে সবজির দাম যতটা কমে, এ বছর ততটা কমেনি। রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে ফইন্নিবাজার, সবখানেই জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষের হতাশা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ক্রেতার নাভিশ্বাস কথাটা সবার কাছে পরিচিত ছিল এতোদিন, এখন বিক্রেতারাও বলছেন নাভিশ্বাস উঠে গেছে তাদের। ৩ বেলা খাবারের জন্য দরকারি এমন কোন পণ্য নেই যার দাম গত ২ সপ্তাহে কমেছে। দাম বেড়েছে সাবান, শ্যাম্পুসহ প্রায় সব ধরনের প্রসাধন সামগ্রীরও।

পরিকল্পনামন্ত্রী স্বীকার করেছেন: দারুণ কষ্টে আছেন মানুষ। গত ৩ মাস ধরে পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য বলছে: মূল্যস্ফীতির গ্রাফ ওপরের দিকেই ছুটেছে। মালিবাগ এবং হাতিরপুল কাঁচাবাজারের দোকানীরা হতাশার চিত্র আরো উসকে দিলেন।

মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষের ওপর কতোটা প্রভাব ফেলে তার আরো স্বচ্ছ ধারনা পাওয়া যায় বিবিএস এর জাতীয় মজুরি সূচক থেকে। বিবিএস বলছে, জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ৫.৯২%। আর মূল্যস্ফীতিও ৬ শতাংশের কাছাকাছি। কাজেই ধার-কর্জ কিংবা সঞ্চয়ে হাত দিতে হচ্ছে কম আয়ের মানুষকে। বিক্রেতাদের শংকা, এখনই তৎপর না হলে রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অরাজক পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে সরকার।

আমরা মনে করি, সরকার যদি এই বিষয়টিকে হালকা এবং উন্নয়নের সূচক হিসেবে দেখে তবে বিষয়টি দেশকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। তাতে সরকারের এত বছরের উন্নয়নের ছবি স্থির চিত্র হয়ে ঝুলতে থাকবে মরা সভ্যতার নোনা দেয়ালে। মধ্যবিত্ত ক্রমশ তার অবস্থান থেকে নেমে যাচ্ছে।

এএ