ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার বিশ্বের প্রধান সব পুঁজিবাজারেই দরপতন হতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম ছিল না দেশের পুঁজিবাজারও। যদিও বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারের সংযোগ নেই বললেই চলে। অবশ্য এর একদিন পরই মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেশের পুঁজিবাজারও ইউক্রেন যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরবে বলে প্রত্যাশা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সব পুঁজিবাজারেই তেজি ভাব দেখা গেছে। এদিন এশিয়ার পুঁজিবাজারে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৫০৬ পয়েন্ট বেড়েছে। চীনের সাংহাই সূচকে ২১ এবং ভারতের বিএসই সেনসেক্সে ১ হাজার ৩২৯ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। এশিয়ার বাজারে ব্যতিক্রম ছিল ভিয়েতনামের হ্যাং সেং। গত শুক্রবার সূচকটি ১৩৪ পয়েন্ট হারিয়েছে।
ইউরোপের পুঁজিবাজারে যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক গত শুক্রবারে ২৮২ পয়েন্ট বেড়েছে। জার্মানির ব্লুচিপ সূচক ডিএএক্স ৫১৫ পয়েন্ট এবং ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ২৩১ পয়েন্ট বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ৮৩৫ পয়েন্ট, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৯৬ এবং নাসডাক সূচকে ২২১ পয়েন্ট যোগ হয়েছে গত শুক্রবার।
বাজার-বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে মস্কোর এমন মনোভাব প্রকাশের পর থেকেই এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের সুযোগ খোলা থাকায় সংকট দীর্ঘায়িত হবে না বলেই মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক আতঙ্ক অনেকটাই কেটে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়ে যায়, যা সূচকের উত্থানে ভূমিকা রেখেছে।
ইউক্রেন সংকটের কারণে গত বৃহস্পতিবার দেশের পুঁজিবাজারেও বড় দরপতন হয়েছে। অবশ্য শুধু এটিই দরপতনের একমাত্র কারণ ছিল না। মার্জিন ঋণ হিসাবের ঋণাত্মক ইকুইটি সমন্বয়ের বিষয়টিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরুর পর প্রথম ১০ মিনিট পর্যন্ত সূচক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে ছিল। এর পর থেকেই আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। এতে বড় দরপতন হয় পুঁজিবাজারে। দিনশেষে ১০৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৬ হাজার হাজার ৮৩৯ পয়েন্টে দাঁড়ায় ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবস শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৯৪৯ পয়েন্টে। এদিন সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যেই সেটি মানুষ জানতে পারছে। এ কারণে ইউক্রেন সংকটের বিষয়টি দ্রুতই সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং আতঙ্কে তারা শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। তবে একদিন পরেই গত শুক্রবারে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূলত ইউক্রেন সংকট যতটা তীব্র আকার ধারণ করবে বলে সবাই মনে করেছিল সেটি হয়নি। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারও ইতিবাচক অবস্থায় ফিরে আসবে।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
এএ