টানা কয়েক কার্যদিবস বাংলাদেশর পুঁজিবাজারে সূচকের পতন চলছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার স্টক এক্সচেঞ্জটির প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ পতন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নিয়ে প্রজ্ঞাপন, নেগেটিভ ইক্যুইটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বয় এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধে। এই চার কারণে পুঁজিবাজারে ধারালো পতন হয়েছে। এর সাথে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী যুদ্ধের ভীতিকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের পতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কিনে নিতে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। সেই গুজবের ফাঁদে পা দিচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।অযৌক্তিক কারণে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ডিএসই সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর খবরে ওই দিন ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছিল ১০৯ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার যুদ্ধের খবরে বিশ্বের বড় সব পুঁজিবাজারেও বড় ধরনের দরপতন ঘটে। তবে গত দুই দিনে বিশ্ব পুঁজিবাজার বড় ধরনের পতনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু যুদ্ধের রেশে বড় পতনের সেই ধাক্কা কাটাতে পারেনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। ফলে দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার সূচকের বড় পতন দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। দুই দিনে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি কমেছে ২৭২ পয়েন্ট।
বিএসইসি মনে করে, লেনদেনের শুরুতে কোনো কোনো ব্রোকারেজ হাউজের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাপক বিক্রি প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেন পরিস্থিতি পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। হঠাৎ করেই বিনিয়োগকারীরা কেন আতঙ্কিত হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করছেন, তাও জানতে চাইছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রোববার লেনদেন শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটে একটি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ থেকেও শেয়ার বিক্রির চাপ আসে। ফলে মাত্র ১৩ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচকটি আগের দিনের চেয়ে ১১৪ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর বড় পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকে শেয়ার বিক্রি না করার জন্য চাপ দেয়। এতে সাময়িকভাবে হারানো মূলসূচকের কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেলে বড় পতনের দিকে এগিয়ে যায় বাজার পরিস্থিতি।
টানা দ্বিতীয় দিনের বড় পতনে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এবং কিছু ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণাত্মক ইকুইটির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে চাইছেন। তবে ইতিমধ্যেই বিশ্ব পুঁজিবাজার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধকল সামলে উঠেছে, যার নজির গত শুক্রবার দেখা গেছে। আর নেগেটিভ ইকুইটির যে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটিও অনেক পুরনো। এক যুগ ধরেই নেগেটিভ ইকুইটি একটি সমস্যা হিসেবে থাকলেও এটির সমন্বয়ে প্রতি বছরই সময় বৃদ্ধি করছে বিএসইসি। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইকুইটি সমস্যা রয়েছে, বাজার পতনে শক্ত ভূমিকা রাখার সামর্থ্য নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সানবিডিকে বলেন, যে সব কারণে পুঁজিবাজারে পতন হচ্ছে, এগুলো কোন সমস্যা না। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ সমাধানের পথে। ফলে বিশ্ব পুঁজিবাজার এখন আবার উর্ধ্বমুখী। কিন্তু আমাদের দেশে তা উল্টো।
তিনি বলেন, নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে একটি আলোচনা চলছে। প্রায় একযুগ ধরে এটি নিয়ে আমরা চলছি। এর সমাধান আমরা সবাই চাই। এর সমাধানের মাধ্যমে যাতে পুঁজিবাজার আরও ভালো হয়, সেই চিন্তা কমিশন করছে। এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক। অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, তার তেমন প্রভাব বাজারে নেই। কারণ ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারে বড় কোন বিনিয়োগ নেই। ফলে সার্বিক দিকে বিবেচনা করে মনে হয় পুঁজিবাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর