মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন হাইকোর্ট থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে মীর কাসেম আলীর তৃতীয় দিনের শুনানি চলাকালে গিয়ে নিজেকে মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম।
পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও আইনজীবী হিসেবে এটা করার অধিকার তার রয়েছে। এটা অসাংবিধানিক নয়, অনৈতিকও নয়। তবে প্রচণ্ড বৈরী পরিবেশের কারণেই এ মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।
বিচারপতি নজরুল জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে একজন আইনজীবী হিসেবে আপিল বিভাগে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে আসছেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল ওইসব মামলায় কোনো আপত্তি তোলেননি। কিন্তু মীর কাসেমের মামলায় অংশ নিলে তার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আপিল বেঞ্চে মীর কাসেম আলীর দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম অংশ নেন।
https://youtu.be/H82NLeA3qms
ওইদিনই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে আপত্তি জানান, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কোনো বিচারপতি এ ধরনের বিচার কাজে অংশ নিতে পারেন না।
পরে আদালতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাবেক হোক আর সিটিং জজ হোক সবাইকে জাজেস কমপ্লেক্সের মর্যাদা রক্ষা করে চলার জন্য আহবান জানান।
ওইদিন আদালত থেকে বের হয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম বলেন, 'মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি চলাকালে অ্যাটর্নি জেনারেল আমার প্র্যাকটিসের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের নিয়ম-কানুন মেনে চলার আহ্বান জানান।'
তিনি বলেন, 'আমি তখন বলেছি, মাই লর্ড অতীতেও আমি এর অপব্যবহার করিনি, এখনও করছি না। আর কয়েক মাস আছি (সুবিধা নিতে পারব), আমি ভবিষ্যতেও এর অপব্যবহার করব না। আমি আইন মেনে আইন পেশায় কাজ করছি। সংবিধান আমাকে ক্ষমতা দিয়েছে।'
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের ২-এর (১) এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে বহাল থাকলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের পর তিনি আপিল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করিতে পারিবেন।'
এরপর এ নিয়ে চলা তীব্র বিতর্কের মধ্যে সোমবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেন।
জানা গেছে, গতবছরের ১২ ডিসেম্বর অবসরে যান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি অবসরোত্তর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এখনও তিনি বিচারপতিদের বাসস্থান ‘জাজেস কমপ্লেক্সে’ বসবাস করছেন।
নিয়ম অনুযায়ী তার সরকারি গাড়ি, নিরাপত্তার জন্য গানম্যান, টেলিফোন বিলসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রয়েছে। অবসরের পর এক বছর পর্যন্ত তিনি এসব সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন।
এর আগে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ সকল নেতার আপিলে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান শুনানি করেছেন। শুধু ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানি করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তার আপিলের শুনানি শুরু হয়।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস