কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী পরিবহনকারী বাসে হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল পৌনে ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত কোটবাড়ি অভিমুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে সকাল নয়টায় ক্যাম্পাসের কাঁঠাল তলায় জড়ো হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তারা ক্যাম্পাসে টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
পরে পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। ৬ দফা দাবি জানিয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসেন সবুজ।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা ও নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, আহতদের চিকিৎসার ভার বহন করা, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত ও তাদের বহনকারী গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরণকারী ইভটিজারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারের আওতায় আনার নিশ্চয়তা প্রদান করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালকের সাথে সিটি মেয়রের অশোভন আচরণ ও তাদের মারধর ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কটুক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ দিকে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা না করায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সোমবার ক্লাসে যাননি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ‘শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সন্ত্রাসী হামলা ও ছাত্রীদের নির্যাতন করা হয়েছে। প্রশাসন এর বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ঐ হামলায় আক্তারুজ্জামানের তিনটি রগ কেটে যায়। এছাড়াও ২৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পুলিশ ঘটনা স্থলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ, ছাত্র উপদেষ্ট ড. মুহম্মদ আহসান উল্যাহ, প্রক্টর মোহাম্মদ আইনুল হক ও পুলিশ প্রশাসন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে মহাসড়ক থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আমাদের আশ্বাসের পর তারা অবরোধ তুলে নিয়েছে। প্রক্টর মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে পক্ষ থেকে হামলার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় শহরের পূজা উদযাপন কমিটি ব্যায় করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলী আশরাফ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলেও জানান।
উল্লেখ্য, গত রবিবার বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস অভিমুখে শিক্ষার্থী বহনকারী বিআরটিসি’র (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৪৯১২) একটি বাস যাচ্ছিল। এ সময় নগরীর ঝাউতলায় এলাকায় সরস্বতী পূজা উপলক্ষে গাড়ি বহরের একটি শোভাযাত্রা যাচ্ছিল। শোভাযাত্রা থেকে কিছু ছেলে বাসে অবস্থানরত ছাত্রীদের লক্ষ্য করে রঙ ছুড়লে ছাত্ররা প্রতিবাদ করেন। পরপরই শোভাযাত্রা থেকে অর্ধশতাধিক লোক এসে লাঠি, রড় ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। তারা ছাত্র-ছাত্রীদের বেদড়ক মারধর করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লোকপ্রশান বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামানের ডান হতের কব্জির তিনটি রগ কেটে যায়। এতে আহত হয় অন্তত ২৫জন। আহত আক্তারুজ্জামান এখন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছেন।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ