ওয়ান ইলেভেনে নিশ্চিত না হয়ে খবর প্রকাশে ভুল স্বীকারের পর, ‘দ্য ডেইলি স্টার'-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক মামলা হয়েছে৷মামলাগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি ও ক্ষতিপূরণের৷ প্রশ্ন, একই অপরাধে এতগুলো মামলা হয় কি?
গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার'-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ৬১টি৷ এরমধ্যে ১৬টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এবং ৫৭টি মানহানির৷ এ সব মামলায় মোট ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৮শ' ৪১ কোটি টাকা৷ শুধু তাই নয়, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং সমনও জারি করা হয়েছে৷
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক-শো অনুষ্ঠানে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধনিমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সরবরাহ করা তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে ছাপার ভুল স্বীকার করেন আনাম৷ বলেন, ‘‘এটি ছিল আমার সম্পাদকীয় নীতিমালার ভুল৷'' এরপর থেকে প্রতিদিনই তাঁর বিরুদ্ধে সারাদেশের আদালতে মামলা হচ্ছে৷ গড়ে প্রতিদিন ৮-১০টি মামলা অব্যাহত আছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ বুধবারও মামলা হয়েছে ৬টি৷
মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলাগুলো দণ্ডবিধির ৫০০/৫০১/৫০২ ধারায় এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চূড়ান্তভাবে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপক্ষো করা হচ্ছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এখনো কোনো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি দেয়নি৷ আর ক্ষতিপূরণের দাবিও করা হয়েছে একই মামলায়৷
এ নিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অপরাধে একাধিক মামলা হতে পারে না৷ মামলা হবে একটাই৷ আর মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হলে তাঁকে আদালতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে৷ কিন্তু ৬০-৭০টি মামলা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না৷ তাছাড়া যারা মামলা নিচ্ছেন, তারা যে কীভাবে একই ঘটনায় একাধিক মামলা নিচ্ছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘মানহানি কার হয়েছে? যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হয়ে থাকে তাহলে মানহানির মামলা তাঁকে করতে হবে৷ এটাই আইন৷ আর ক্ষতিপূরণের মামলা করতে হলেও সেটা তিনিই করবেন৷ কিন্তু আমার জানা মতে তিনি কোনো মামলা করেননি৷ যারা করছেন তাদের মামলা করার ভিত্তি কী?''
তাঁর কথায়, ‘‘একই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আলাদাভাবে হতে পারে, যদি তা ব্যাখ্যা করা যায়৷ কিন্তু আইনটি হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সরকারের পক্ষ থেকে সেই মামলা করতে হবে৷ সাধারণ উৎসাহীরা কীভাবে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন? তাছাড়া সরকারবিরোধী তো রাষ্ট্রবিরোধীতা নয়৷ রাষ্ট্র এবং সরকার এক জিনিস না৷''
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘একই ঘটনায় বা অপরাধে একাধিক মামলা হয়ে থাকলেও আলাদা-আলাদা বিচারের সুযোগ নেই৷ সবগুলোকে একটি মামলা হিসেবে বিবেচনা করাই আইনের নিয়ম৷''
তিনি বলেন, ‘‘মানহানির মামলার ক্ষেত্রে, যার মানহানি হয়েছে তিনি ছাড়া অন্য কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে এই মানহানি তারও হয়েছে, একমাত্র তবেই তিনিও মামলা করতে পারেন৷ যেমন ভাইয়ের মামহানি হলে তার আরেক ভাই মামলা করতে পারেন৷ আর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো আদালত বা থানার নেয়ার সুযোগ নেই৷ কেউ আবেদন করলে করতে পারেন, কিন্তু তা কার্যকর হয় না৷''
তাঁর কথায়, ‘‘মাহফুজ আনাম আইনের ঊর্ধে নন৷ তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতেই পারে৷ তবে তা হতে হবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে৷ তিনি চাইলে একই ঘটনায় এতগুলো মামলা কেন করা হচ্ছে – এর প্রতিকার চাইতে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন৷''
ডয়চে ভেলে