দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক, অসার এবং অপ্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করে বলেন, এতে দলের নামে মনোনয়ন বাণিজ্য আরো রমরমা হবে।
‘নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন’ সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়ার প্রেক্ষিতে ড. বদিউল আলম মজুমদার জাগো নিউজের কাছে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ড. আলম বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনকে রাজনীতিকীকরণ করতে এবং দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে সরকার যুক্তি দেখাচ্ছে। এই যুক্তি একেবারেই অসার, খোড়া এবং দুর্বল।
কারণ, স্থানীয় সরকার নির্দলীয় হলেও একটি রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাজনৈতিক মোড়কেই এই সরকার ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করতে হয়। একে নতুন করে রাজনৈতিক চাদরে ঢাকার কোনো দরকার নেই।
দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আশাবাদ ব্যক্ত করা অবান্তর। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দলগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আনতে পারে নাই, সেখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমন আশা করা একেবারেই উচ্চাশার নামান্তর।
‘স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন আবশ্যক এমনটি দাবি সর্বমহলের’দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত তাতে সহায়ক হতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সুজনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ। আপনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন এবং সম্প্রতি সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সামনে আনেন। দেখতে পাবেন দলের নামে নির্বাচনে কি হয়।
অনেক কিছুই পরির্বতনের দাবি রাখে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সেই বাস্তবতা মেনেই পরিবর্তন হওয়া উচিত। সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো দুর্বল এবং একদলীয় ক্ষমতায়নের রূপ দেবে।
উন্নত বিশ্বে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীক নিয়েই অনুষ্ঠিত হয়’ সুতরাং বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি প্রাসঙ্গিক হতে পারে কি-না- এমন প্রশ্নের উত্তরে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বাঙালির দল নেই, আছে দলাদলি। রবীন্দ্রনাথের এ কথা প্রমাণও হয়েছে। এখানকার রাজনীতি দলাদলিরই সার। উন্নত বিশ্বের কোথায় ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই উদাহরণও টানা উচিত। কেবল একটি মাত্র দলের সমর্থকদের সামনে রেখে এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এভাবে নির্বাচন হলে বেশির ভাগ প্রার্থীই শাসক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হবেন এবং তারাই একছত্র প্রভাব খাটাবেন। তখন স্থানীয় সরকারের নিজস্বতা বলতে আর কিছু থাকবে না।
উল্লেখ্য, সোমবার স্থানীয় সরকার পরিচালনার সংশোধিত পাঁচটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইন-২০১৫’, উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০১৫’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০১৫’, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ ও স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন না হলে সরকারি প্রশাসন থেকে কাউকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যাবে।