যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ও সন্তানকে পিটিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক মো. মিজানুর রহমান। এর দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন স্ত্রী। আসামি মিজানুর রহমানকে গত দুই মাসেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ তিনি একই মন্ত্রণালয়ে রাতে ঘুমিয়ে মাসের পর মাস পার করছেন। পুলিশের ভয়ে তিনি দিনে অফিসের কাজ শেষে রাতে আর বাড়ি ফেরেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি মামলার বাদী মোতাহারা আক্তার (খুকী) সানবিডির কাছে এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে না পেয়ে গত ১৪ আগস্ট আমার স্বামী মিজানুর রহমান আমাকে এবং আমার মেয়েকে মারধর করে গভীর রাতে বাসা থেকে বের করে দেয়। ১৮ আগস্ট লালবাগ থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে ১৯ আগস্ট আদালতে মামলা করি। আদালত ২১ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও পুলিশ মিজানুরকে খুঁজে পাচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘র্যাব-পুলিশ নাকি তার হাতের মুঠোয়। মামলা করায় আমার নাকি খুবই সমস্যা হবে। তাকে কেউ ধরতে পারবে না। সে নাকি সচিব ও মন্ত্রীদের প্রটোকল মেইনটেইন করে। তার ক্ষমতাও নাকি অনেক। পুলিশ তো কিছুই করতে পারবে না তার। এসব ভয় দেখিয়ে আমার কাছে লোক পাঠায় সে।’
মামলার এজাহারে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৬ জুন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলার চান্দাল গ্রামের মেয়ে মোতাহারা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ৬ ভরি সোনার অলঙ্কার ও ঘরের আসবাবপত্রসহ মোট সাড়ে ৫ লাখ টাকার মালামাল দেওয়া হয়।
২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তার (রাইসা রহমান রিতু) বয়স ৫ বছর। সে এখন লিটল এনজেল স্কুলে নার্সারিতে পড়ছে।
অভিযোগ রয়েছে, মিজানুর বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় মোতাহারাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। মোতাহারাও কয়েক দফায় আরো ৩ লাখ টাকা বাবার বাসা থেকে এনে মিজানুরকে দিয়েছে।
এর পরেও গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে একবারে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে মিজানুর। না দিলে তার সঙ্গে সংসার করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এর আগেও যৌতুকের নাম করে প্রায়ই অফিস থেকে বাসায় ফিরে মোতাহারাকে মারধর করত মিজানুর। বাবা-মার নাম ধরে গালিগালাজ করত। মোতাহারা গত ১৪ আগস্ট জানিয়ে দেয়, তার বাবা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবে না। এতে মিজানুর ক্ষেপে গিয়ে মারধর করে রাত ১টার দিকে মেয়ে রিতুসহ মোতাহারাকে বের করে দেয়। পরে বাবা-মাকে ফোন করে জানালে তারা মতিঝিলের ভাড়া বাসা থেকে এসে মিজানুরের আজিমপুরের ভাড়া বাসা থেকে তাদের নিয়ে যায়।
গত ১৮ আগস্ট আদালতে মামলা হলে ২১ আগস্ট মিজানুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে লালবাগ থানাকে আসামি ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু লালবাগ থানা পুলিশ প্রায় দুই মাসেও মিজানুরকে ধরতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলার আসামি মিজানুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ পেলেও মুলত তিনি মন্ত্রী ও সচিবদের প্রটোকল মেইনটেইন করেন। তিনি নিয়মিত অফিসও করেন। মামলা হওয়ার পর কিছু দিন মন্ত্রণালয়ের কক্ষেই রাত কাটাতেন। বর্তমানে তিনি ১০/সি, পলাশী স্টাফ কোয়ার্টার (২য় তলা) আজিমপুরে থাকেন। আবার মাঝে মাঝে মন্ত্রণালয়েই ঘুমান।
এ বিষয়ে জানতে লালবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পরিতোষ চন্দ্রকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। থানায় গিয়ে খুঁজতে হবে কোন মামলার কে আসামি, আদৌ ধরা পড়েছে কি না তিনি।’
এ প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্ত্রী যে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি হজ্ব করেছি। আমি সবসময় সত্য কথা বলি। আমি যৌতুক চাইব কেন। বরং আমি তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। আমি আমার মেয়ের জন্য চিৎকার করে কাঁদি। আমি সংসার করতে চাই। কিন্তু সে সংসার করতে চায় না। আমার কাছে ফ্ল্যাট চায়। ফ্ল্যাট কিনে দিলে তবেই সে সংসার করবে বলে জানায়। আমি অসুস্থ। মন্ত্রণালয়ে কম যাই। সুস্থ হলে আদালতে যাব।’
র্যাব-পুলিশের ভয় দেখিয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগও ডাহা মিথ্যা। আমি কেন র্যাব-পুলিশের ভয় দেখাতে যাব। বরং উল্টো আমার চাকরি চলে যাবে বলে ভয় দেখিয়ে বারবার হুমকি দিয়েছে।’
সানবিডি/ঢাকা/রাআ