দেশের বস্ত্র খাতের প্রায় সব কারখানা গ্যাস সংকটের মুখোমুখি। একই পরিণতি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতেও। এ খাতের কারখানাগুলোতে সক্ষমতার অন্তত ২৫ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গ্যাসের এ সংকটকে অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি বাজারের জন্য বড় বিপদ বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, আসছে নববর্ষ ও ঈদের কেনাকানাটায় কম উৎপাদনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। দুই উৎসব ঘিরে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কার মেঘ। রপ্তানি খাতেও বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের তৈরি হবে বিরূপ মনোভাব। গ্যাস সংকট কেটে গেলেও কম সময়ে উৎপাদিত পণ্য কয়েকগুণ বেশি খরচে আকাশপথে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
গ্যাসের তীব্র সংকটের কথা জানিয়ে সব কারখানা কর্তৃপক্ষ বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) হস্তক্ষেপ চেয়েছে। পিএসআই কমে শূন্য হয়ে যাওয়া মিটারের ছবিও জমা দিয়েছেন অনেক কারখানার মালিক। এরই পারপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানের সঙ্গে গতকাল দুপুরে দেখা করেছেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবারও বলেছেন, সংকট নিরসনের চেষ্টা করছেন তারা। আমদানি করা এলএনজি (তরল করা প্রাকৃতিক গ্যাস) আসবে আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ইতোমধ্যে ক্ষয়-ক্ষতির কথায় বিটিএমএ সভাপতি বলেন, গ্যাসের অভাবে একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে প্রয়োজন মতো পিএসআই না থাকায় প্রায় সব পণ্যের ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মান খারাপ হয়েছে।
গ্যাস সংকটে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানায় সক্ষমতার কম উৎপাদন হচ্ছে। আবার বস্ত্র খাতের উৎপাদন সংকটের প্রভাবও পড়ছে পোশাক খাতে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের নিট ক্যাটাগরির ৯৫ শতাংশ এবং ওভেন ক্যাটাগরির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ সুতা এবং কাপড়ের জোগান দেয় বিটিএমএর কারখানাগুলো। এ ছাড়া স্থানীয় বস্ত্র ও পোশাক বাজারের প্রায় শতভাগ জোগান দিয়ে আসছে বস্ত্রকলগুলো। বিটিএমএর প্রধান নির্বাহী মনসুর আহম্মেদ জানান, দুই সপ্তাহ ধরে সমিতির সদস্য সব বস্ত্রকল বন্ধ রয়েছে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, গ্যাস সংকট অনেক দিন ধরেই চলছে। তিন মাস ধরে অবস্থা বেশি খারাপ। দুই সপ্তাহ ধরে সংকট তীব্র আকার নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ মার্চ জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কাছে বিটিএমএর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, গ্যাসের চাপ কম থাকায় স্পিনিং, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলগুলোর উৎপাদন মারাত্মক বিঘ্নিত হয়েছে। এর সঙ্গে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে সুতা ও কাপড় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে ঈদ ও নবর্ষের মতো উৎসবে ২০ হাজার কোটি টাকার বস্ত্র ও পোশাকের বাজার হাতছাড়া হবে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে বস্ত্র খাতের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় গ্যাস সংকট সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।
সানবিডি/ এনজে