দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক ঘোষনাও দিয়েছেন। তবে তার অধিকাংশ কেবল মাত্র কাগজে কলমে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে সামান্যই। এতে দেশের পুঁজিবাজার তলানিতে যাচ্ছে অব্যাহত ভাবে।
প্রথমে ব্যাংক, এরপর সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। এরপর মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলাররা। পাশাপাশি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা- পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে বাজারে তারল্য বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কোনো পদক্ষেপই কাজে লাগছে না।
সবশেষ ঘোষণা ছিল, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রোজায় তিনশ কোটি টাকা আর আড়াইশ স্টক ডিলার এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। কিন্তু রোজার তিন কর্ম দিবসেই লেনদেন কমল ক্রমাগত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসইসি’র পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন না হওয়াতে দেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বিনিয়োগকারিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আস্থার সংকট। একই সাথে তারল্যের অভাব ব্যাপক ভাবে দেখা দিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) রমজান মাসের তৃতীয় দিনেও দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ২৪ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ১৫৪ পয়েন্ট। আগের দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতন হয়েছে ৫৩ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছিল ১৩৯ পয়েন্ট।
এর আগে মার্চ মাসের শেষ কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার) হাতবদল হয়েছিল এক হাজার একশ কোটি টাকার বেশি শেয়ার। রোজার প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেন নেমে আসে ৮০০ কোটির টাকায়। এবং সোমবার লেনদেন নেমে আসে ৬০০ কোটি টাকার ঘরে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আরও কমে তা নেমেছে এসেছে ৫৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ১২ হাজার টাকায়। এ তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ১৫ এপ্রিলের পর লেনদেন এত নিচে আর নামেনি। প্রায় এক বছর আগের ১৫ এপ্রিল হাতবদল হয়েছিল ৫৫৬ কোটি ৪২ লাখ ১২ হাজার টাকা।
দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন যেমন কমছে। তেমনি আগের দিনের মতোই ঢালাওভাবে কমেছে শেয়ারের দাম। দিন শেষে সব মিলিয়ে কমেছে ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের দাম, বেড়েছে ৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার। এরপর ছিল লাফার্জহোলসিম, আইপিডিসি, জিএসপি ফাইন্যান্স, ভিএফএসথ্রেড লিমিটেড, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ইয়াকিন পলিমার, এডিএন টেলিকম, জেমিনি সি ফুড এবং রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেয়ারবাজারে এ দরপতনের ধারা শুরু হয় গত বছরের অক্টোবর থেকে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নিয়ে মতবিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় এ দরপতন। পরবর্তী সময় নভেম্বরে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেওয়া হলে পতনের মাত্রা আরও বাড়ে। যা চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে পতনের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। কিন্তু এর মধ্যেই গত ২৪ ফেব্রয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করা নিয়ে বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও টানা বড় দরপতনের মধ্যে পড়ে শেয়ারবাজার।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে তার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। কিন্তু এটাও সত্য আমাদের শেয়ারবাজার কোনো ব্যাকরণ মেনে চলে না। আমাদের বাজারের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী না বুঝে বিনিয়োগ করে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করেছে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আবার বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, বাজারে একদিকে দরপতন হচ্ছে, অন্যদিকে বছরের পর বছর লভ্যাংশ দেয় না ও লোকসানের মধ্যে রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ছে। এটা কেন হচ্ছে তাও বিএসইসি’র খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজার পড়ছে কী কারণে আমার কাছে ব্যাখ্যা নেই। রিটেইল ইনভেস্টররা নাকি অন্য কেউ শেয়ার বিক্রি করছেন জানি না।
সর্বোচ্চ দরপতনেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএসইসি নির্ধারিত দর পতনের নতুন সার্কিটের কারণে সর্বোচ্চ সীমায় দরপতন বলা হচ্ছে। আসলে সেই দরে পোষালে কিনছে না হলে কিনছে না।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
এএ