ঠাকুরগাঁও জেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন সদর উপজেলার নারগুন ও বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে এবং বালিয়াডাঙ্গী উপ শহরের বেশ কয়েকজন কৃষি উদ্যোক্তা।
গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ বেশকিছু জাতের ফুল চাষকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থান। এছাড়া জেলা শহরে ও বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশ কিছু ছোট বড় নার্সারি গড়ে উঠেছে, চলছে বাণিজ্যিক আবাদ।
বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, নার্সারি পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে কিছু ফুল চাষ ও চারা উৎপাদন করে জেলার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা এখন ফুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তাদের দেখে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অন্যান্য এলাকার স্থানীয় কৃষকরা। আর ফুল চাষকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থান। এছাড়া ফুলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় আশপাশের অন্যান্য চাষিরা আগ্রহী হয়ে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আর রঙ-বেরঙের বিভিন্ন জাতের চাষবাদকৃত ফুটন্ত ফুল ও ঘ্রাণ নিতে ছুটে আসছেন অনেকেই।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এবার এ জেলা প্রায় ৫২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফুলের আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল মাত্র ৩৪ হেক্টর জমিতে। দিন-দিন এ জেলায় ফুল চাষ বাড়ছে। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন জাতের উন্নতমানের ফুল চাষ করা হয়েছে। কেউ বা শখের বশে বাগান করছেন। কেউ বা করছেন বাণিজ্যিক ভাবে চাষ। তবে ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় ফুল চাষ বাড়ছে প্রতি নিয়ত। এছাড়াও জেলায় প্রায় ৩ শতাধিক নার্সারি রয়েছে। যেগুলোতে ফুলের চাষ ও ব্যবসায় করা হয়ে থাকে।
ফুল চাষি নাসিমুল আলম ও রফিকুল ইসলাম জানান, গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন জাতের উন্নতমানের ফুল চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকদের যত্নে চাষাবাদকৃত চোখজুড়ানো ফুটন্ত এসব ফুল দ্রুতই বেড়ে উঠছে। সরবরাহ করা হচ্ছে বাজারে। সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের কদর থাকায় একটা সময় অন্যান্য জেলা থেকে স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করা হলেও এখন নিজ জেলায় উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল।
সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের মৌচাক নার্সারির মালিক ও ফুল ব্যবসায়ি মোবারক আলী জানান, আগে ঠাকুরগাঁওয়ে স্বল্প সংখ্যক মানুষ ফুল চাষ ও ফুলের ব্যবসায় করতো। এখন দিন-দিন ফুলের চাহিদা বাড়ায় ফুল চাষ ও নার্সারির সংখ্যা বেড়েছে। এখন অনেকে বাণিজ্যিকভাবেও ফুলের চাষ করছেন। তবে ফুল চাষ এ জেলায় আরো সম্প্রসারণ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও শহরের ফুল বিতানের মালিক মো. বাবু জানান, ঠাকুরগাঁও শহরে জন্মদিন, বিবাহসহ নানা আচার অনুষ্ঠানে এমকি সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা থাকায় বেশ ভালো ফুল বেচাকেনা হয়। আগে অনেক কষ্ট করে যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এসব এলাকা থেকে ফুল কিনে এনে ব্যবসায় করতে হতো। কিন্তু এখন নিজ জেলায় ফুল উৎপাদন হওয়ায় কম খরচে ফুল কিনতে পারছি। সাথে পরিবহন খরচ বাঁচছে, বাঁচছে সময় ও টাকাও। শহরের বড়মাঠের পাশে ফুল সজ্জার মালিক রহমত আলী জানান, আগে ফুল নষ্ট হতো, চাহিদা কম ছিল, আর এখন ক্রেতার ফুল চাহিদা মোতাবেক পাওয়াই কষ্টকর। তারপরেও বেশ ভালো ব্যবসা হচ্ছে ফুলের।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কৃষ্ণ রায় বলেন, আগে ঠাকুরগাঁওয়ে বাইরে থেকে ফুল এনে ব্যবসা করতে হতো, ব্যবসায়িদের অনেক কষ্ট ও হয়রানিও হতো। খরচও বেশি হতো। দিন দিন এ জেলায় ফুলের চাহিদা বাড়ছে। সে কারণেও উৎপাদন প্রয়োজন। সেই হিসেবে শহরে ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গোলাপ, গাদা, রজনীগন্ধাসহ বেশ কিছু ফুলের বাগান গড়ে উঠেছে। এই বাগানগুলো পর্যবেক্ষণ করছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে এই বাগান মালিকদের কৃষি বিভাগ থেকে। সাথে চলছে আরো ভালো জাতের কিছু ফুল চাষের সম্ভবনা পরীক্ষার কাজ।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ ফুল চাষিদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ ও সেবা প্রদান করছেন, সেই সঙ্গে কৃষকদের ফুল চাষে উৎসাহিত করছেন।
অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এ জেলায় ফুল চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে যেমন লাভবান হবেন কৃষক, অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুনমাত্রা। পাশাপাশি কৃষির সাথে ফুল চাষের সংযোগ করে এ জেলায় ফুল চাষি, ব্যবসায়ি ও ফুল প্রেমী সকলেরই স্বল্প খরচে, সহজে ও সুলভে ফুল পাবেন এমনটাই জানান, কৃষি বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তার।
এএ