শিক্ষার্থী হলো নদী আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো সাগর। তাই যখন নদীর মোহনা সাগরের স্রোতের সাথে মিলিত হয় তখন পুর্ণতা পায় নদী। অনুরুপ কোন শিক্ষার্থী যদি ছাত্রজীবনে বিদ্যালয় আর কলেজের গন্ডি পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে তখনই সে তার ছাত্রত্বের পুর্ণতা পায়। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এমন সব চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের নবাগত শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানার মাথায়।
জীবনের কাঙ্খিত স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সোহেল বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। যখন থেকে নিজেকে বুঝতে শেখেছি তখন থেকেই আমার মনে হয়েছে আমাকে পরিবারের হাল ধরতে হবে। আর আমি প্রথমবারেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছি। আমি ভবিষ্যতে একজন জেলা প্রশাসক হতে চাই।
দক্ষিণবঙ্গের এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়তে চায়। তবে ভয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কি না? কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশ লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক সহিংসতা, মারামারি ও হলদখলের চেষ্টা লেগেই থাকে। ফলে যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সে স্বপ্ন অধরা থেকে যায় এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে।
আরেক শিক্ষার্থী ঝিনাইদহ জেলার আরাফাত রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে অনেক বেশি আনন্দিত। ইতোমধ্যেই বিভাগের ক্লাস শুরু হয়েছে। বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষা সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা পেয়েছি। ভবিষ্যত স্বপ্ন একজন দক্ষ সাংবাদিক হওয়া। আমার বিশ্বাস সেই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সে সুযোগ নিশ্চিত করবে। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সর্বাধিক সুযোগ থাকবে তা না হলে আমরা তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়বো। নিজেদেরকে বর্তমান বিশ্বায়নের সঙ্গে উপযোগী করতে পারবো না।
রাজশাহী জেলার সুমন সে ভর্তি হয়েছে অর্থনীতি বিভাগে। তিনি বলেন, আমি একজন উচ্চ র্পযায়ের ব্যাংক কর্মকর্তা হতে চাই। আর সে জন্যেই এই বিভাগে ভর্তি হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় বলতে কি বুঝ? এমন প্রশ্নে সুমন বলেন, কোন মেয়ে তার নারীত্ব অনুভব করে যখন সে মাতৃত্ব লাভ করে, ঠিক তেমনই কোন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারে সে তার ছাত্রত্ব উপলব্ধি করতে পারবে না। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা আধিপত্যের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে ছাত্র জীবনের মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পুরণ হচ্ছে না।
সোহেল, আরাফাতের মতই উচ্চশিক্ষা অজর্নের স্বপ্ন নিয়ে রানা ভর্তি হয়েছেন আইবিএ বিভাগে। তিনি বলেন আমি আাইন বিভাগে ভর্তি হবার সুযোগ অর্জন করেছিলাম তারপরও আমার আকাঙ্খার বিষয়েই ভর্তি হয়েছি। কারণ ভবিষ্যতে আমি আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতে চায়। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে বিশ্ববিদ্যালযের পরিবেশ কেমন হবে? জানতে চাইলে নাটোরের এই শিক্ষার্খী বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার ক্যাফে, সমৃদ্ধ ও উন্নত গ্রন্থাগারসহ কার্যকর ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থাকবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আবাসিকতার ব্যবস্থা থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন আবাসিক হল নিমার্ণ করার এবং সকল আবাসিক হলগুলোতে ডরমিটরি কক্ষের ব্যবস্থা করার। ইতোমধ্যেই শাহ্ মখদুম হলে ডরমিটরি কক্ষের কাজ শুরু হয়েছে। আমি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে বদ্ধপরিকর। এবং সব ধরনের সুবিধার জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/হৃদয়/এসএস