স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে ২০২৬ সালে বের হলে বাংলাদেশকে কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, সে নিয়ে করণীয় নির্ধারণে ‘রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’ গঠন করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটির সদস্যসংখ্যা ৪৪। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২২ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ ১১ জন মন্ত্রী, অর্থসচিব, বাণিজ্যসচিবসহ ১১ জন সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিডা, বেজা, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতিসহ সম্পর্কিত বিভিন্ন চেম্বার ও সমিতির সভাপতিরা এ কমিটির সদস্য।
দেশের সার্বিক রপ্তানি পরিস্থিতি পর্যালোচনা, রপ্তানির ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা, রপ্তানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত বিষয় পর্যালোচনা ও এলডিসির তালিকা থেকে ২০২৬ সালে বেরিয়ে যাওয়ার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে এ কমিটির কার্যপরিধি।
টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে রপ্তানি পদ্ধতি, রপ্তানিতে উৎসাহ দেওয়া, রপ্তানি পণ্য উৎপাদনসংক্রান্ত বিষয়ে পর্যালোচনাও কার্যপরিধির মধ্যে আছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ কমিটি নিয়মিতভাবে বৈঠক করবে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা করবে।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ করেছে। বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে।
তখন বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। কিছু সুবিধাও পাওয়া যাবে, যা মূলত অর্জন করতে হবে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর বেশি সমস্যায় পড়তে হবে রপ্তানি খাতকে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পায়, তা আর পাওয়া যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে পাওয়া শুল্কসুবিধাও বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও বলা আছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল থাকবে।
ডব্লিউটিওর গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে বাংলাদেশি পণ্যে নিয়মিত হারে যে শুল্ক বসবে, তাতে বাংলাদেশকে বাড়তি শুল্ক গুনতে হবে বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া ওষুধশিল্পের ওপর মেধাস্বত্বের বিধিবিধান কড়াকড়ি হবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হয় না। মেধাস্বত্বের (পেটেন্ট) ওপর অর্থ দেওয়া হলে ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। ২০৩৩ সালের আগে কোনো দেশ যদি এলডিসি থেকে বের হয়, তাহলে সুবিধা আর থাকবে না। এদিকে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে।
বিপরীত চিত্রও আছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে ও গরিবের তকমা থাকবে না।
এএ