কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে জোরেশোরে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা বর্তমানে কৃষিকে বাণিজ্যিক ও লাভজনক করতে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে প্রচেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এ এক্সপোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে দেশের অর্জিত বিস্ময়কর সাফল্য ও কৃষিপণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মর্যাদা ও সম্মান আরও নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে এক্সপোতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
মন্ত্রী জানান, সরকারের পাশাপাশি দেশের এসিআই, প্রাণ গ্রুপ, হাশেম ফুডস, স্কয়ার ফুডস, গ্লোবপ্যাক ফুডস, বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড আ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশনসহ প্রায় ২০টির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজ খরচে যাতায়াতসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এক্সপোতে অংশগ্রহণ করছে।
মন্ত্রী বলেন, এক্সপোতে প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, বাংলাদেশ দিবস উদযাপন, সমাপনী অনুষ্ঠান, প্যাভিলিয়ন পরিচালনাসহ সফলভাবে এক্সপোতে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এক্সপো চলাকালীন (৬ মাস বা ১৮০ দিন) পর্যায়ক্রমে প্যাভিলিয়নে / নেদারল্যান্ডসে এক্সপোতে গমণ করবেন এবং বিজনেস নেটওয়ার্কিং, দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা ও ব্রিফিং, প্যাভিলিয়ন ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি, নেদারল্যান্ডসে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি আগ্রহী শিক্ষার্থীদের প্যাভিলিয়নে কাজে লাগাতে নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস কাজ করে যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, এক্সপোতে বাংলাদেশ নিজেদের উদ্ভাবন ও গ্রিন সল্যুশনস বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে।দেশের মানসম্মত নিরাপদ শাকসবজি, ফলমূল ও ফুলের এবং কৃষিপণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, স্টলে দেশের কৃষির বিভিন্ন সাফল্যের উপর নির্মিত ১৩টি ডিজিটাল ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এক্সপোতে বাংলাদেশ দিবস পালন ও বিভিন্ন সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সৃষ্টি ও ব্রান্ডিং তৈরির সুযোগ হবে। আমসহ অন্যান্য ফল, ফসল ও প্রসেসড ফুড ইউরোপে রপ্তানির বিদেশিদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশের প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও জ্ঞান-অভিজ্ঞতা জানার ও তা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে।
এই এক্সপোতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব হারটিকালচার প্রডিউসারস (এআইপিএস) এর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের তৈরি হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে প্রতিদিন প্রায় ৭০০-১২০০ দর্শনার্থী পরিদর্শন করছে। তারা বাংলাদেশের পণ্যের প্রতি বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশন প্রতি দশকে একবার নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত হয়। এবার বসেছে এক্সপোর ৭ম আসর। এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘সবুজ নগর গড়ে তোলা’। এবারের এক্সপোটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফ্লোরিয়েড এক্সপোর হিসেবে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৬৮% মানুষ নগরে বাস করবে। নগরকে কীভাবে আরও সবুজ, সুন্দর ও বাসযোগ্য করা যাবে, সে বিষয়ে উদ্ভাবন ও গ্রিন সল্যুশনস এই এক্সপোতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
নেদারল্যান্ডসে ৭ম আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশনে (ফ্লোরিয়েড এক্সপো-২০২২) সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ। ৬মাস ব্যাপী এই এক্সপো শুরু হয়েছে বিগত ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, আর উদ্বোধন হয়েছে তার আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার। চলবে ৯ অক্টোবর, ২০২২ পর্যন্ত। বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ অফিসিয়াল পার্টনার হিসাবে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া অন্যান্য প্যাভিলিয়ন হচ্ছে: ন্যাশনাল ৬২টি, গ্রীন হাউজ ১৬টি, হাইটেক গ্রীন হাউজ ১৫টি, এক্সপিরিয়েন্স গ্রীন হাউজ ৬২টি, নার্সারি ৯০টি, পার্টনার্স ২৫টি, প্যারেনিয়াল ১২টি, ফ্লাওয়ার বালব ১২টি, অ্যাক্সোটিক প্লান্ট ৫টি ও ডাইভারস ১৫টি।