রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের মানসিক বিকাশে আনা হয়েছে নতুন ধরণের ভ্রাম্যমান স্পোর্টস লাইব্রেরী। শুধু শরণার্থী নয়, স্পোর্টস লাইব্রেরীর মাধ্যমে খেলাধুলা এবং বিনোদন সুবিধা পাবেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্পোর্টস লাইব্রেরীতে থাকছে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টসহ স্থানীয় খেলাধুলার সরঞ্জাম। এটি একটি দৃষ্টিনন্দন মোটর ভ্যানে সজ্জিত, যা সহজে এক স্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যায়।
ফ্রান্স ভিত্তিক প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন এবং আমস্টার্ডাম ভিত্তিক স্পোর্টস সংগঠন ক্লাবু’র সহযোগিতায় চালু হয়েছে এ ভ্রাম্যমান স্পোর্টস লাইব্রেরী। কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় এটি পারিচালনা করছে দেশের অন্যতম সামাজিক সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’।
স্থানীয় কোচের তত্বাবধানে খেলাধুলার মাধ্যমে এখানকার ছেলে-মেয়েদের বিনোদন, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং ইতিবাচক চিন্তার সুযোগ হবে। ভ্রাম্যমান স্পোর্টস লাইব্রেরী থেকে প্রতিদিন খেলাধুলার সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় পাঁচ’শ ছেলে-মেয়ে। শরণার্থী জনগোষ্ঠিকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন খেলাধুলা, গান-মিউজিক এবং ক্রীড়াঙ্গনের সাথে পরিচিত করছে লাইব্রেরী ভ্যানের সাথে লাগানো টেলিভিশন।
কক্সবাজার শরণার্থী এলাকায় এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার। কক্সবাজার এলাকায় নতুন উদ্ভাবিত এ ভ্রাম্যমান স্পোর্টস লাইব্রেরী, শরণার্থী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে খেলাধুলার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে একটা ইতিবাচক মানবিক শক্তি তৈরি করবে বলে আশা করছেন তারা।
প্যারিস সেন্ট জার্মেইন এনডাওমেন্ট ফান্ডে’র উপ-পরিচালক সাবরিনা ডেলানয় জানান, এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আজ স্থানীয় শিশুদের মাঝে আশা এবং উৎসাহ যোগাবে স্পোর্টস লাইব্রেরী। আমরা চাই খেলাধুলার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি, সব শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে।
ক্লাবুর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জান ভান হভেল বলেন, বাংলাদেশে কয়েক হাজার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন- পিএসজি’র পথ চলার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলার মাঠে এখানে প্রত্যেকেই চ্যাম্পিয়ন। গর্ব ও সাহসের সাথে খেলাধুলার মাধ্যমে কক্সবাজারে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শিশুদের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান বলেন, বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের জন্য উন্নয়ন সহযোগি সংস্থাগুলো চমৎকারভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আত্মিক শান্তি এবং উৎসাহে আমাদের কিছু করা দরকার। জন্ম যেখানেই হোক না কেন, প্রত্যেক শিশুর আছে খেলাধুলার অধিকার। আমরা আশাকরি এই সুযোগ শিশুদের মেধা বিকাশ এবং মানবিক উন্নয়নে সহযোগিতা করবে।
ভ্রাম্যমান স্পোর্টস লাইব্রেরীর পাশাপাশি কক্সবাজারে তৈরি করা হচ্ছে ক্লাব সেন্টার। যেখানে থাকছে খেলার মাঠ, সিনেমা দেখা এবং খেলাধুলা শেখার সুবিধা। সৌর বিদ্যুত চালিত ক্লাব সেন্টারটি চলতি গ্রীষ্মেই চালু হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সারাবিশ্বে তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছে পিএসজি ও ক্লাবু। আগামী কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজার শরণার্থী এলাকায় চলবে খেলাধুলার এই কর্মসূচী।