নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উত্তরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরচিত। রংপুর বিভাগের একমাত্র বিমানবন্দরটি এখন শুধু অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের জন্য উপযোগী। তবে ভারত-নেপাল-ভুটান-মালদ্বীপের সঙ্গে বাণিজ্য বিস্তারে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। মূলত আঞ্চলিক বাণিজ্যের হাবে রূপ দিতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে ঘিরে এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে। সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে মাস্টারপ্ল্যান। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের তৈরি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, সৈয়দপুরে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তুলতে পুনর্বাসন ও রিলোকেশনে ৯১২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। জমি অধিগ্রহণে একটি প্রকল্প নিচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনায় আশাবাদী ব্যবসায়ীরাও। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে বলে মনে করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি প্রকৌশলী এসএম সফিকুল আলম বলেন, সৈয়দপুর শিল্পনগরী হিসেবে সুপরিচিত। এখানে ইপিজেডকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এখানকার বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হিসেবে গড়ে তোলা হলে বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধা পাব আমরা। কার্গো ফ্লাইট চলাচল হলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে খুব সহজে আমাদের উৎপাদিত পণ্য রফতানি করতে পারব। ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে নেপালের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়ালি নেপাল সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, নেপালের বিরাটনগর থেকে সৈয়দপুরের বিমানবন্দরের ফ্লাইং টাইম প্রায় ২৫ মিনিট। এ বিমানবন্দর তারা ব্যবহার করতে পারলে কম সময়ের মধ্যে দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজ হবে।
ব্রিটিশ আমল থেকেই এ অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সৈয়দপুর। এর মূল কারণ এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্রিটিশ আমলেই রেল যোগাযোগের হাব হিসেবে এটি গড়ে ওঠে। দেশের বৃহত্তম রেল কারখানাও রয়েছে সৈয়দপুরে, যেটিকে ঘিরে এ শহরের গোড়াপত্তন।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় ১৯৭৮ সালের ২৪ এপ্রিল। ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর জায়গায় স্থাপিত এ বিমানবন্দরের উদ্বোধন হয় পরের বছরের ২১ জুলাই। ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন চলাচল করছে দশটির বেশি ফ্লাইট। প্রায় ৬ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে এ বিমানবন্দরে।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আকাশপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে রিজিওনাল বিমানবন্দরে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ১২ হাজার ফুটে। এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত যেসব জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ও পার্বতীপুরে বেলাইচণ্ডী ইউনিয়ন। নতুন করে ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং, কার্গো টার্মিনাল, বিল্ডিং কন্ট্রোল টাওয়ার, পাওয়ার হাউজ, পাম্প হাউজ, ফায়ার স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন, অপারেশনাল ভবন, ভিআইপি ও ভিভিআইপি লাউঞ্জ, আবাসিক ভবন নির্মাণ, হ্যাঙ্গার, ভিডিওআর, ডিএমই, এনডিবি, আইএলএস, সিসিআর, এজিএল, রাডার স্টেশন, ওয়াটার সাপ্লাই ও ড্রেনেজ সিস্টেম, ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, এমটি ভবন, কারপার্ক, অ্যাপ্রোচ সড়ক, ইন্টারনাল সড়ক এবং পেরিফেরাল পেট্রল সড়ক নির্মাণ করা হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ প্রসঙ্গে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমীক্ষা করানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর গড়ে তোলা হবে। এটিকে একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে।
সানবিডি/এনজে