উত্তরাঞ্চলের মতো বরিশালের জমিকে বহু ফসলি করতে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প আমরা হাতে নেব।
সোমবার (৯ মে) দুপুরে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের নন্দপাড়া গ্রামে বোরো ধানের এক মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা জানান। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় এই মাঠ দিবসের আয়োজন করে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশাল একসময় শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির অভাবে মাত্র একটি ফসল আমন ওঠার পর বরিশালে বছরের ছয় থেকে সাত মাস বিপুল পরিমাণ জমি পতিত থাকে। ফলে সেই খ্যাতি হারিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বরিশালের সেই শস্যভান্ডারের খ্যাতি পুনরুদ্ধার করতে চাই।’
মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের মতো বরিশালের জমিকে বহু ফসলি করতে আমরা মহাপরিকল্পনা নিয়েছি। দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প আমরা হাতে নেব। টাকা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা উদ্যোগের। এবার সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ অঞ্চলের ১০০ একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু ধানের জাত সম্প্রসারণ করে এ অঞ্চলকে কৃষিতে স্বয়ম্ভর করা হবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও–পোড়াও, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন। বিএনপি যতই আন্দোলন করুক না কেন, তাতে কাজ হবে না। তাদের দলের নেতা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, আরেক নেতা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে অন্য দেশে পালিয়ে থাকে। তারা কখনো জনগণের বন্ধু হতে পারে না। জনগণ তাদের সঙ্গে আছে, সেটা বিএনপিকে কথায় নয়, ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। মানুষ এখন আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা চায় না। মানুষ শান্তি চায়। আগামী নির্বাচনেও মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে।’
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা এখনো গরু দিয়ে হালচাষ করেন। কৃষকেরা কেন পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ করেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যর্থতা আমাদের। আমাদের বিজ্ঞানীরা ব্রি-৬৭ বোরো ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততার সমস্যার জন্য ব্রি লবণসহিষ্ণু জাত আবিষ্কার করেছে। এগুলো মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাওয়ার টিলার, সেচের জন্য খাল খনন ও পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের কৃষির কী কী সমস্যা আছে, সেগুলো দেখে সমাধানের জন্য আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। আমরা এই অঞ্চলের কৃষির পুরোনো গৌরব, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আপনারা সবাই আন্তরিক হলে সম্মিলিতভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।’
ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে হওয়া বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্থানীয় কয়েক শ কৃষক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার, ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন, বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রফি উদ্দীন, বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী স্থানীয় একটি বোরো ধানখেত পরিদর্শন করেন। এর আগে বাকেরগঞ্জর বাকরকাটি এলাকায় আরও একটি বোরোর প্রদর্শনী খেত পরিদর্শন করেন তিনি। বিকেলে মন্ত্রী পটুয়াখালীতে যান এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ও করমজাতলা গ্রামে মুগডাল ও বোরো খেত পরিদর্শনে যান।
ঘূর্ণিঝড় অশনির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদি এর প্রভাবে কৃষি খাতে কোনো ক্ষতি হয়, তা পুষিয়ে নিতে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
এএ