চাঞ্চল্যকর পিলখানা হত্যা মামলার আপিলের সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী জুনের মধ্যে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা হতে পারে বলে প্রত্যাশা উভয়পক্ষের আইনজীবীদের।
পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামিদের করা সব ফৌজদারি আপিলের ওপর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে বিরতিহীন শুনানি চলছে।
গত বছর ১৮ জানুয়ারি থেকে শুনানি শুরু হয়। এ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির মধ্যে ১১৪ জনের ক্ষেত্রে মামলার বিষয়বস্তুর ওপর আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিষয়বস্তুর ওপর আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হতে পারে। এরপর আইনগত বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে অন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে জুনের মধ্যে এ মামলায় রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা করছেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ মামলায় যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তাতে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে বিচার শেষ হতে পারে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলামও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছেন, যেভাবে বিরতিহীন বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তাতে মে মাসের আগে এর বিচার শেষ হবে না। তবে সব মিলিয়ে আরো ২/৩ মাস লাগতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে ফাঁসির আসামিদের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর ওপর যুক্তি উপস্থাপন করছি। এটা শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ আইনগত বিষয়ে যুক্তি দেখাবেন। তারপর আসামিপক্ষ আপিলের বিষয়ে খালাস চেয়ে আইনগত বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে অন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ায় প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ, এরপর আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করবে।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে গত বছর ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। গত বছর ৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন।
এ বেঞ্চের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় তার পরিবর্তে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে দায়িত্ব দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়।
শুনানিতে প্রথমে রাষ্টপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১৫২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে মামলার বিষয়বস্তুর ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম, শামীম সরদারসহ অন্য আইনজীবীরা বিষয়বস্তুর ওপর যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত ট্রাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এরপর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর লালবাগের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার শুরু হয়। বিচার শেষে গত বছরের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান।
মামলার আসামি ছিল ৮৪৬ জন। এ মামলায় তৎকালীন বিডিআরের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু (কারাগারে মৃত্যু), স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে আরো ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭৭ জন।
নিম্ন আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি ১৩৮ জন ফাঁসির আসামিসহ অন্য আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন।