ফজলি আমের জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বত্ব নিয়ে সৃষ্ট টানাপোড়েনের মধ্যে এ আমকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ উভয় জেলার আম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ মে) শুনানি শেষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে।
রাজশাহী আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রাজশাহীর আম হিসেবে জিআই সনদ পায় ফজলি। এরপর এ আমের মালিকানা নিয়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ উভয় জেলা স্বত্ব দাবি করলে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এ শুনানি হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১ থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক অধিদপ্তরে এ বিষয়ে শুনানি হয়। রাজশাহীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম।
শুনানি শেষে অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ফজলি আমের জিআই স্বত্ব নিয়ে শুনানি শেষে ‘রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম’ হিসেবে নতুন করে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) ঘোষণা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হবে রোববার।
জানা গেছে, এ রায়ে কোনো পক্ষের আপত্তি থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে তাদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শুনানিতে। কেউ আদালতের আশ্রয় না নিলে আগামী দুই মাস পরে জিআই পণ্য ফজলি আমের নতুন জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) গেজেটে প্রকাশিত হবে।
গত ৬ অক্টোবর আমটির ভৌগোলিক নির্দেশক নাম হয় ‘রাজশাহীর ফজলি আম’। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক তাদের জিআই ১০ নম্বর জার্নালে (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ এর ১২ ধারা অনুসারে তা প্রকাশ করেছে।
এ স্বীকৃতির জন্য ২০১৭ সালের ৯ মার্চ আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের পক্ষ থেকে ফজলি আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দাবি করে এর বিরোধিতা করা হয়। তাদের দাবি, ফজলি আমের সবকিছু চাঁপাইনবাবগঞ্জের পক্ষে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৫ সালে করা ভারতের ‘সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অপারেশনস ইন দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব মালদা’ বইয়ে উল্লেখ লেখা আছে, ফজলি আম চাঁপাইনবাবগঞ্জে হতো। এছাড়া দেশের মোট উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি ফজলি আম উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
অন্যদিকে রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীনের দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি মূলত ভারতের মালদহের ফজলি। কিন্তু তা রাজশাহীর ফজলির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে তা সম্পূর্ণ আলাদা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অবস্থিত প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদের অভ্যন্তরীণ দেওয়ালের টেরাকোটায় ফজলি আমের প্রতিকৃতি রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে রাজশাহীর বাঘা এলাকার ফজলি আম ‘বাঘা ফজলি’ নামে কলকাতার বাজারে সমাদৃত ছিল।
এএ