বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে মালয়েশিয়ার বিশাল শ্রমবাজার। দেশটিতে কর্মীদের যাওয়ার পথ অবশেষে খুলতে যাচ্ছে। দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এ বিষয়ে আলোচনার জন্য গতকাল বুধবার ঢাকায় এসেছেন।
আজ বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
বাংলাদেশ সফরকালে সারাভারানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ হতে পারে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে আগে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালু করতে হবে। কারণ এটি বাংলাদেশিদের জন্য পাঁচ লাখেরও বেশি শ্রমবাজার। এ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, সারাভারানের সঙ্গে বৈঠকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করার সব প্রতিবন্ধকতা দূর হতে পারে।
জানা যায়, গত ২৬ মে তিনজন সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে চিঠি দেন। চিঠির সঙ্গে গত ২৪ মে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক একটি মতবিনিময়সভার পরামর্শ এবং ওই সভায় উপস্থিত বায়রার ৫২৯ জন সদস্যের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর বাংলাদেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে মালয়েশিয়া। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে বিপুলসংখ্যক চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চাহিদাপত্র সত্যায়ন করছে না। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং তারা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবর্তে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ ১২টি সোর্স কান্ট্রির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এতে বিশাল সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সংগঠন গত রবিবার জানায়, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভানানের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে একটি চক্র তৎপর হয়েছে। এরা চায় না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হোক।
এদের দাবি, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর ঢাকা সফরের ঠিক আগের দিন গত মঙ্গলবার বায়রার কিছুসংখ্যক সদস্য বা রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকার একটি হোটেলে সভা ডেকেছিল। এর আগেও তারা মিছিল, মানববন্ধন করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে দুই সরকারের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তোলার চেষ্টা করেছে। আবারও এ ধরনের সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছু ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৭-২০১৮ সালের মতো এবারও মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী নিয়োগের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সহজ পদ্ধতিতে এবং স্বল্প সময়ে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে।
সানবিডি/এনজে