সাঁতার কাঁটতে গেলে বা ঝরনার নিচে গোসলের সময় অনেক ক্ষেত্রে হঠাৎ কানে পানি ঢুকে যায়। তবে বেশি পরিমাণে পানি না ঢুকলে তেমন একটা সমস্যা হয় না। কানের ভেতরের ওয়াক্স অল্প পরিমাণ পানি শোষণ করে নেয়।
তবে কানে বেশি পরিমাণ পানি গেলে সমস্যা হতে পারে। আর কারো কানে যদি ছিদ্র থাকে বা আগে থেকে সংক্রমণ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে কানে পানি গেলে সমস্যা হতে পারে। তাই কানে পানি ঢুকলে সাবধান। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে তাদের যাতে কানে পানি না ঢোকে সেই ব্যবস্থা আগে থেকে নিতে হবে।
যাদের মধ্যকর্ণে প্রদাহ সিএসওএম আছে তাদের সাঁতার কাটতে যতই ইচ্ছে করুক পানিতে নামা যাবে না। কারণ, কানে পানি ঢুকলে কিন্তু সংক্রমণ বাড়বে।
এমনকি গোসলের সময় দুই কানে তুলা গুজে দিন। যাঁরা নিয়মিত সাঁতার কাটেন বা সুইমিং পুলকে ভালোবাসেন তাঁরা গোসলের আগে কানে তুলা গুজে নিতে পারেন। নোংরা পুকুর বা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটবেন না।
সাবান ও শ্যাম্পু কানের ছিদ্র থেকে দুরে রাখুন। কটন বার্ড দিয়ে অযথা কান খোচানোর অভ্যাস থাকলে সেটা দূর করুন। এতে কানের ময়লা বের করতে গিয়ে কানে সংক্রমণ হতে পারে। অনেক সময় কানের পর্দা ফুটোও হয়ে যেতে পারে।
আর কানের ময়লা বের করার দরকার হয় না। এটা এভাবেই তৈরি যে, আপনা আপনি ময়লা বের হয়ে আসে। যদি কানের ময়লা অনেক বেশি হয় যে কানের ছিদ্র পূর্ণ হয়ে যায়, শুনতে অসুবিধা হয়, তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন, তবুও কটনবাড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
পানি কানের মধ্যে ঢুকতেই পারে। ভয় পাবেন না। আমরা ছোটবেলায় প্রকৃতিগতভাবে অনেক কিছুই শিখে থাকি। যেমনটা শিখি কানে পানি গেলে। কানে পানি ঢুকলে সাথে সাথে মুরব্বিরা কান কাত করে ঝাঁকাতে বলতেন। সেই সাথে দাঁতে দাঁতে কাটতে বলতেন। এটা কিন্তু বৈজ্ঞানিক। এটা করতে পারেন।
সাথে হাতের তালু দিয়ে কানের ছিদ্রপথে জোরে চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে হাত সরিয়ে নিন। এতে ভ্যাকুয়ামের মতো কাজ করে পানি বের হয়ে আসবে।
ভ্যালসালভা মেনুভার করতে পারেন। এর মানে হলো, প্রথমে নাক শক্ত করে চেপে ধরুন। এরপর মুখ শক্ত করে বন্ধ করুন। এখন আস্তে আস্তে নাক দিয়ে বাতাস ছাড়তে চেষ্টা করুন। নাক চেপে ধরেছেন তাই চাইলেও কিন্তু বাতাস বের হবে না। ফলে কানে চাপ পড়বে। এতে পানি বের হয়ে আসতে পারে।
এবার যে কানে পানি ঢুকেছে সে দিকে কাত হোন। তবে যাদের কানে সমস্যা আছে যেমন মধ্যকর্ণের ইনফেকশন, তাঁরা এমনটা করতে যাবেন না। আবার নাক দিয়ে খুব বেশি জোরে বাতাস ছাড়ার চেষ্টা করবেন না। এতে কিন্তু কানের পর্দায় সমস্যা হতে পারে।
ছোটবেলায় কানে পানি ঢুকলে আমরা সরিষার তেল কানের ভেতরে দিয়ে কিছুক্ষণ পর কান কাত করলে পানি আপনাআপনি বের হয়ে আসত। এটা করতে পারেন তবে সরিষার তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল এ ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে। তিন/চার ফোঁটা অলিভ অয়েল কানে দিয়ে মিনিট দশেক রাখুন। এবার যে কানে পানি ঢুকেছে সে দিকে কাত হন। পানি বের হয়ে যাবে।
হেয়ার ড্রায়ার দিয়েও কাজ সারতে পারেন। যে কানে পানি ঢুকেছে সে কানে হেয়ার ড্রায়ারের বাতাস দিন। পানি থাকলে তা বাষ্প হয়ে বের হয়ে যাবে। তবে কানের খুব কাছ থেকে দেবেন না। বেশিক্ষণও দেবেন না।
গরম পানিতে তোয়ালে বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে কানে ধরুন। ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখুন। চার/পাঁচবার এভাবে করুন। এরপর যে কানে পানে ঢুকেছে সেদিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
ভাপ ওঠা পানির ভাপ নাক দিয়ে টানতে থাকুন মিনিট দশেক ধরে। মাথা কাত করে রাখুন কিছুক্ষণ। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তিন/চার ফোঁটা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
এত কিছু করার পরও যদি পানি বের না হয় বা কান ভারী ভারী লাগে অথবা কানে শুনতে সমস্যা হয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। অবহেলা করবেন না। চিকিৎসক আপনার কান পরীক্ষা করে দেখবেন পানি আছে কি না।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ