দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এখন তৈরি পোশাক শিল্প। তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসে এ শিল্প থেকে। তাজরিন-রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর নানা সংকটের মধ্যেও এ শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। এ অগ্রযাত্রার প্রধান কারণ, রানা প্লাজাই এখানে একমাত্র গল্প নয়। অনেক কমপ্লায়েন্ট ও গ্রিন কারখানা রয়েছে এদেশে। যাদের প্রতি ক্রেতাদের শতভাগ আস্থায় কখনই চিড় ধরেনি। এমনি এক কারখানার নাম কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেড। রানা প্লাজা ধসের পর যখন গোটা শিল্পখাতই ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছিল, তখনো নিরবে রফতানি কার্যক্রম চালিয়ে গেছে এ কারখানা। এইচএন্ডএম, সিএন্ডএ, স্পোর্টমাস্টার, জারা’র মতো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রফতানি আদেশ এতটুকুও কমায়নি বলে জানান কারখানা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবস্থিত এ কারখানাটি সবুজে ঘেরা ২২ একর জমির ওপর অবস্থিত। ভবনগুলোয় সুশৃঙ্খভাবে কাজ করেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। ভবনগুলোর মাঝখানে যথেষ্ট ফাকা জায়গা রাখা হয়েছে। একেক ভবনে একেক সেক্টরের কাজ চলে। এটি একটি কম্পোজিট কারখানা হওয়ায় নিটিং (বুনানো) থেকে শুরু করে স্যুইং (সেলাই) পর্যন্ত সম্পন্ন করার পর সরাসরি পণ্য এক্সপোর্ট হয় এখান থেকেই। সবকিছু এখানে আলাদা ভবনে স্বাস্থ্যসম্মত পন্থায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরিবেশবান্ধব এ কারখানায় রয়েছে বিশাল জায়গাজুড়ে নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ও পানি পরিশোধনাগার (ডব্লিউটিপি)। যা একটি কারখানা কমপ্লায়েন্ট হওয়ার অন্যতম শর্ত। ওয়েকো টেক্স, কন্ট্রোল ইউনিয়ন, বিএসসিআই, জিওটিএস কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত কমপ্লায়েন্ট কারখানা এটি। কারখানাটিতে কাজ করে চার হাজারেরও বেশি শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান ছাড়াও এখানে নিশ্চিৎ করা হয় সব সযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র কারখানা যেখানে রয়েছে একটি স্যাটেলাইট ক্লিনিক। কুমুদিনি মেডিকেল কলেজের পরিচালনায় এই ক্লিনিকে শ্রমিকরা ৫০ শতাংশ খরচ দিয়ে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। বাকি ৫০ শতাংশ খরচ বহন করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ক্লিনিক সম্পর্কে কারখানার পরিচালক আকবর হায়দার মুন্না বলেন, একজন শ্রমিক অসুস্থ থাকলে কারখানার উৎপাদনশীলতা কমে যায়। এজন্যই আমরা এ ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছি। এ ক্লিনিক চালাতে আমাদের যে অতিরিক্ত খরচ হয় তা শ্রমিকরা অসুস্থ থাকলে উৎপাদনে যে ক্ষতি হতো তার চেয়ে কম।
এছাড়া সব শ্রমিক, কর্মচারী কর্মকর্তার জন্য ভবিষ্যৎ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। বিশেষ দিবসগুলোতে এখানে শ্রমিকদের নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় বলেও তিনি জানান। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানা থেকে এখন প্রতিবছর গড়ে ছয় কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয়। এখানকার নিয়মিত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলো, সুইডেনের এইচএন্ডএম, বেলজিয়ামের সিএন্ডএ, জার্মানির ইংলেবার্ট স্ট্রস, রাশিয়ার স্পোর্টমাস্টার ও স্পেনের জারা। রানা প্লাজা ধসের পর এসব প্রতিষ্ঠান ক্রয় আদেশ কমিয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে আকবর হায়দার মুন্না বলেন, আমাদের ওপর ক্রেতাদের আস্থা কখনোই কমেনি। সুতরাং ক্রয় আদেশ কমার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারখানা এরিয়ার মধ্যেই একপাশে গড়ে উঠছে একটি প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং। এটি যুক্তরাষ্ট্রের লিড কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত গ্রিন বিল্ডিং। এই বিল্ডিং তৈরি হলে এখানে আরো আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান আকবর হায়দার। এ শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে পোশাক শিল্প সঠিক পথেই এগুচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বিজিএমইএ ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তার চেয়েও বেশি রফতানি হবে।