দেশের অন্যতম প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁর সাপাহার থেকে সোমবার চলতি মৌসুমে আমের প্রথম চালান রপ্তানির উদ্দেশ্যে ঢাকার শ্যামপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার রাতেই নওগাঁর আমের এই চালান ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে পৌঁছবে।
কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে চাষ করা সাপাহারের বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক নামের একটি বাগান থেকে এই চালানে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নর্থবেঙ্গল অ্যাগ্রো লিমিটেড এক টন (১ হাজার কেজি) আম্রপালি আম ইংল্যান্ডের বাজারে পাঠাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, বিদেশে নিরাপদ আম রপ্তানি করার লক্ষ্যে নওগাঁয় ৮০ জন চাষিকে ‘উত্তম কৃষিচর্চার (গ্যাপ)’ মাধ্যমে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু চাষির সঙ্গে রপ্তানিকারক কোম্পানির চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ চাষিরা আম চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে সোহেল রানা নামে একজন আমচাষির বাগান থেকে বিদেশে আম্রপালি আম পাঠানো হচ্ছে। এটি চলতি বছর নওগাঁ থেকে বিদেশে আম রপ্তানির প্রথম চালান।
বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে তিনি একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত বছর থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফুড এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে তিনি উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষ করছেন। এ বছরও তিনি ১০০ বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তোলা দুটি বাগানে উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষ করেছেন। তার বাগানে রপ্তানি উপযোগী আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাংগো, বারি-৪, গৌড়মতি, কাটিমন জাতের আম চাষ হয়েছে। গত বছর ৮ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করেছেন তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা। এ বছর অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা করছেন তিনি।
সোহেল রানা বলেন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নর্থ বেঙ্গ অ্যাগ্রো লিমিটেডের মাধ্যমে ১ টন আম্রপালি আম ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাঠানো হলো। প্রত্যেক কর্মী হ্যান্ড গ্লাভস পরে গাছ থেকে পরিপক্ব এসব আম সংগ্রহ করেন। আমগুলো সিকেচার (এক ধরনের কাঁচি) দিবে বোটাসহ কাটতে হয়। এরপর পরিষ্কার ক্রেটে করে সংগ্রহ করা আমগুলো এনে বাগানের শেডে (ছাউনিতে) এনে ফ্যানের বাতাসে রাখা হয়। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাগহীন পরিষ্কার আমগুলো বাছাই করে ক্রেটে পরিষ্কার কাগজ দিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়ে প্যাকেজিং করা হয়। শেষে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ১ টন আম ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকার শ্যামপুরে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজের উদ্দেশ্যে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নানা ধাপ পেরিয়ে ২ কেজি কার্টুনে প্যাকিজিং করে মঙ্গলবার রাতে নির্দিষ্ট ফ্লাইটে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা।
তিনি আরও বলেন, চলতি সপ্তাহে ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে আরও ৪ টন আম পাঠানোর চুক্তি রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার ৮০ জন আমচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব চাষির বাগানে ৯০ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাপনায় চাষ হওয়া অন্তত ১০০ মেট্রিক টন আম চলতি মৌসুমে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এএ