ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) পরিচালক মিসেস সালমা নাসরিন বলেছেন, ফিনটেক হলো ফাইন্যান্স, ইকোনমিক্স, একাউন্টিং ও ইনফরমেশন টেকনোলজিসহ সব কিছুর একটি সমন্বিত জ্ঞান৷ ফিনটেক ফিন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট, প্রসেস এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের সাথে সংশ্লিষ্ট উন্নত টেকনোলজি যেমন আরবিট্রেশন ইন্টিলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ব্লক চেইন, ডেটা এনালাইটিক্স এগুলোর মাধ্যমে নিত্য নতুন সার্ভিসগুলোকে আরও মর্ডানাইজ করে৷ আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে ফিনটেক নতুন এক সম্ভাবনা।
ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক) সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে বিআইসিএম এর সহযোগিতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক চার মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে গত মঙ্গলবার (২৮ জুন) সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সালমা নাসরিন বলেন, Accenture-এর গবেষণায় দেখা যায় ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী ফিনটেক-এ বিনিয়োগ ২০১% বেড়েছে৷ এর আওতায় সব ভেঞ্চার এ ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ ৭-৮ বছর আগেই আর্থিক শিল্পগুলো তাদের বিজনেস প্রসেস ও প্রোডাক্ট এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাস্টমারকে আকৃষ্ট করার জন্য ফিনটেক ব্যবহার করছে৷ তাই বলা যায়, ফিনটেক বিশ্বব্যাপী ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এর ধারনাটাকেই বদলে দিয়েছে৷
তিনি আরও বলেন, ফিনটেক আজকের দিনে উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে৷ ফিনটেক ব্যাংকগুলোকে প্রতিস্থাপন করবেনা, তবে রূপান্তর করবে৷ গতানুগতিক ব্যাংকিং সিস্টেম হয়ত বেশি দিন থাকবেনা৷ বাংলাদেশে ফিনটেক তো শুধু মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কেন্দ্রিক৷ প্রতিদিন গড়ে ৭% লেনদেন বেড়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস -এ৷ পুরোপুরি সমাধানের জন্য আমাদের প্রয়োজন সমন্বিত পদ্ধতি৷ এককভাবে ফিনটেক হলে চলবে না৷ দেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এর আন্ত কার্যকারিতা বাড়ানো দরকার৷ তাহলেই ভারতের মত এ দেশেও ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবে৷
ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, ফিনটেক হল ফাইন্যান্স এবং টেকনোলজিরই কম্বিনেশন৷ এটি একটি অতি সাম্প্রতিক বিজনেস ইস্যু যা ফিনান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভাষায় এটি হচ্ছে অন-লাইন বা মোবাইল সল্যুউশান৷ যেমন লেনদেন, পেমেন্ট, ইন্স্যুরেন্স ট্রান্সফার ও ইনভেস্টমেন্টস, একাউন্টিং-ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড ক্রেডিট এমনটি অন্যান্য সার্ভিসও এর অন্তর্ভূক্ত৷
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ফিনটেক পরিচিতি, গ্লোবাল এবং বাংলাদেশ ফিনটেক মার্কেট, ফিনটেক প্রযুক্তি ও এর এপ্লিকেশন, ফিনটেকের বিভিন্ন ব্যবহারকারী সম্পর্কে বর্ণনা, ফিনটেক কোম্পানির সক্ষমতা, ফিনটেক গ্রহণ ও বিনিয়োগের নীতি এবং অনুশীলন, ফিনটেক থেকে রেগটেক এবং পলটেক, ফিনটেকের বিনিয়োগ শিক্ষা, অন্তর্ভূক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ফিনটেক ক্যাপাস্টোন প্রকল্প ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়৷
প্রশিক্ষণ কর্মশালার লিড ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এর এসোসিয়েট প্রফেসর ড. সূবর্ণ বড়ুয়া৷
ডিএসইর ট্রেনিং একাডেমির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাকের সাঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপণী দিনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিআইসিএম-এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার৷
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিআইসিএম-এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার তৃণমূল স্তরের মধ্যে ফিনটেক এর প্রয়োগকে কাজে লাগানোর পথ তৈরি করেছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবাগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার হিসেবে আপনারা ফিনটেকের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ডিএসইর গ্রাহক সেবা প্রসারিত করার এই সুযোগটি বিবেচনা করতে পারে। এটি সারাদেশে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্প্রসারণের সাথে হাতে তাত মিলিয়ে চলা উচিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সেল ফোন নেটওয়ার্ক পৌছেছে সেখানে এই সেবা পৌছানো যেতে পারে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ শেয়ারবাজারে জড়িত সাধারণ মানুষকে আর্থিকভাবে লেনদেনে সহায়তা করবে।
আমাদের সকলকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমাদের শেয়ারবাজারের পরিধি আরো ব্যাপক হওয়া দরকার৷ অধিক লেনদেন সমন্বয় করার জন্য নতুন পণ্য, সংশোধিত নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বেশিরভাগ টেকনোলজি, অর্থায়নসহ মানবসম্পদ উন্নয়নকে বহুগুণে উন্নত করতে হবে। এখানেই, ফিনটেকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকলের উচিত এই ক্ষেত্রে উন্নয়নের সমতা বজায় রাখার চেষ্টা করা। আমাদের চারপাশে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে তা গ্রহণ করার এবং এই পরিবর্তনগুলোর ফলে যে প্রযুক্তিগুলো সামনে আসছে তা শেখার বিকল্প নেই। আমাদের কাছে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি শেখার উৎস রয়েছে। শত শত লার্নিং আউটলেট আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলা করার জন্য সর্বশেষ জ্ঞান এবং প্রয়োগ দক্ষতা উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরী করছে৷
শেয়ারবাজারের উন্নয়নে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। এই জন্য বিআইসিএম ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি ফিনটেকের উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিআইসিএমকে সাথে রাখার জন্য ডিএসইকে ধন্যবাদ জানান৷
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ বলেন, ডিএসইর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগদানের পর আইটি ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর এই জন্য ডিএসই’র অধিকাংশ কর্মকর্তাদের আইটি বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আর ফিনটেক যেহেতু নতুন একটি ধারনা সেই হিসেবে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। আর এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজনে সহযোগিতার জন্য বিআইসিএম কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আপাতত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ফিনটেক সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করবে৷ পরবর্তীতে ডিএসই ফিনটেক কোম্পানি হিসেবে পরিচালিত হবে৷ এজন্য যদি শুধু গুটি কয়েক লোকের ফিনটেক সম্পর্কিত জ্ঞান থাকে তাহলে পরবর্তীতে ডিএসইকে ফিনটেক কোম্পানি হিসেবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে৷ সেজন্য চারমাসব্যাপী এই ট্রেনিং এর আয়োজন৷ তিনি আরও বলেন, ফিনটেক এ দক্ষ জনশক্তি তৈরী করলেই চলবে না, আমাদের স্টেকহোল্ডারদেরও সমৃদ্ধ করতে হবে৷ ভবিষ্যতে আরো বিশদ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে৷ মিড লেভেল থেকে আপার লেভেল সকল কর্মচারীদের ফিনটেক সম্পর্কিত জ্ঞান আাহরণ করতে হবে৷ যাতে তারা নতুন পণ্য ডিজাইনে আমাদের সাহায্য করতে পারে৷ একটা পণ্য বা প্রোডাক্ট ডিজাইন করতে গেলে ফিনটেকের জ্ঞান থাকা জরুরী।
এএ