মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে দেশের সর্বস্তরের অর্থনীতি। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিসহ জনজীবনকে কোণঠাসা করে দেওয়া কোভিড-১৯-এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। এসব ব্যবসাকে আবারও মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার। প্রণোদনা ও কম সুদে ঋণ দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার শর্ত সহজ করতেও বলা হয়। এরই সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের সিএমএসএমই খাত। বিগত ২০২১ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্র্রতিক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এক বছরের ব্যবধানে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সিএমএসএমই খাতে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪৭ গ্রাহক ঋণ পেয়েছে ৫১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে এ খাতের ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৪৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। তবে গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে ঋণ বিতরণ।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, করোনাকালীন ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও তারা কম ঋণ পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ বিতরণ দিকে বেশি ঝুঁকে। আর ছোট ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ পেতে নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়। তাই অনেক সময় এসব ঋণগ্রহীতার ঋণ পেতে আগ্রহ হারায়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৮ হাজার ১৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় ১১ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার ঋণ। আলোচিত সময়ে জামানতবিহীন ঋণ ৯ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে কুটির (কটেজ) প্রতিষ্ঠানে ৭৪০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। মাইক্রো খাতের প্রতিষ্ঠানে ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র শিল্পে ২৯ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা এবং মাঝারি শিল্প খাতে ১৩ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো।
বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে প্রস্তুতকারক শিল্পে গেছে ১৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা এবং ব্যবসা উপ-খাতের প্রতিষ্ঠানে ২২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এসএমই এবং কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখেছে ঋণ বিতরণের অবস্থা। এর ফলে এ খাতে আগের চেয়ে ঋণ বিতরণের হার বেড়েছে। এ হার বিগত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে।
এনজে