রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য। আর এই ঊর্ধ্বগতির কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যে নিমজ্জিত হয়েছে আরো প্রায় সাত কোটি ১০ লাখ মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
সব মিলিয়ে ১৫৯টি দেশের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে ইউএনডিপির ২০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে।
মূলত উন্নয়নশীল দেশের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটের কথা বলা হয়েছে এতে। জানানো হয়েছে, যুদ্ধের প্রথম তিন মাসের মাথায় আনুমানিক পাঁচ কোটি ১৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছে। দিনে এক ডলার ৯০ সেন্ট বা তার চেয়েও কিছুটা কম খরচে দিনাতিপাত করছে তারা। এ ছাড়া আরো দুই কোটি মানুষ দিন যাপন করছে দৈনিক তিন ডলার ২০ সেন্ট খরচে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি বাজার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া দেশ দুটি এ খাতগুলোর বৈশ্বিক বাজারের অন্যতম প্রধান অংশীদার। একদিকে রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহক এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক। অন্যদিকে ইউক্রেনের একার দখলেই ছিল বৈশ্বিক গম রপ্তানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ, ভুট্টা রপ্তানির ১৪ শতাংশ এবং সূর্যমুখী তেল রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি বাজার।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে শস্য রপ্তানি করতে না পারার বিষয়টি দাম আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী যে দেশগুলোতে দারিদ্র্যের ব্যাপক প্রভাব দেখা গেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া, উজবেকিস্তান, বুরকিনা ফাসো, ঘানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, সুদান, হাইতি, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, অর্থনৈতিক সংকটের জেরে অনেক দেশে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বহু দেশ ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর অর্ধেকেরও বেশি ঋণ নিয়ে দেউলিয়াত্বের মুখে রয়েছে বা এর ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে সাংসারিক আয়ের ৪২ শতাংশই খাদ্যের পেছনে খরচ করে থাকে পরিবারগুলো। পশ্চিমা দেশগুলোর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে জ্বালানি এবং গম, চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই মানুষগুলো বিপাকে পড়েছে।
ইউএনডিপি প্রশাসক আখিম স্টাইনার বলেছেন, ‘জীবনযাত্রার খরচের প্রভাব একটি প্রজন্মের মধ্যে প্রায় নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং সে জন্যই এটি এত গুরুত্বপূর্ণ। ’
আখিম স্টাইনার আরো বলেছেন, এত বেশি মানুষ এত দ্রুত দরিদ্রতার সম্মুখীন হয়েছে যে তা মহামারির শীর্ষ সময়ের আর্থিক কষ্টকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউএনডিপির মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনটির লেখক জর্জ মলিনাও বলেন, ‘এই গতি অত্যন্ত দ্রুত। ’
গত বুধবার প্রকাশিত পৃথক এক জাতিসংঘ প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২৩০ কোটি মানুষ যথেষ্ট খাদ্যের ব্যবস্থা করা নিয়ে মাঝারি ও প্রবল মাত্রার অসুবিধার মুখে রয়েছে। এ অবস্থা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই চলছে।
সূত্র : আলজাজিরা
এএ