শরীয়তপুরে সংযোগ সড়ক না থাকায় পদ্মা সেতুর পুরো সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের জাজিরা নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত যাতায়াতের যে সড়ক রয়েছে, তা খুবই অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা। ফলে যানজটে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে শরীয়তপুরবাসীকে। যানজটের কারণে দুই ঘণ্টার পথ যেতে ৪-৫ ঘণ্টা লাগে বলে বাসচালক ও যাত্রীরা জানিয়েছেন। শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধনও করেছেন শরীয়তপুরের সর্বস্তরের জনগণ।
জানা যায়, ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচন করে দেওয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছিল। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন তাদের পূরণ হয়েছে। কিন্তু ভাঙাচোরা সড়কের কারণে পদ্মা সেতুর পুরো সুফল পাচ্ছেন না তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের জাজিরার নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত সড়ক খুবই অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা। সড়কটিতে দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলার উপায় নেই। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া এক গাড়ি আরেক গাড়িতে সাইড দিতে পারে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বিভিন্ন পরিবহণের চাপে সড়কের অবস্থা এখন আরও করুণ। তীব্র যানজট ও বেহাল রাস্তার কারণে সড়কটি দিয়ে শরীয়তপুরের মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।
শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, রাস্তা সরু, একটু পরপর গর্ত। এ কারণে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যানজটের কারণে ২ ঘণ্টার পথ যেতে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়কের দাবিতে ১২ জুলাই পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। এতে জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে বলা হয়, ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২৬ জুন শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১২ থেকে ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কে চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ সংযোগ সড়কের কারণে পিছিয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে শরীয়তপুর জেলা সদর পর্যন্ত চার লেনের সড়ক করার জন্য সড়ক ও সেতু বিভাগ সচিবকে চাহিদাপত্র দেন। এরপর ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর এবং ১৭ ডিসেম্বর আরো দুটি চাহিদাপত্র দিয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তাগিদ দেন উপমন্ত্রী। এছাড়া শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন এমপিও এ ব্যাপারে চাহিদাপত্র দেন। এরপর ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একনেক সভা ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, জমি অধিগ্রহণ এবং করোনার কারণে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কটির নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে চার লেন সড়ক বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুবিধা নিশ্চিতে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে তিনটি গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আপাতত দুই লেনের সড়ক হলেও পরবর্তী সময়ে সেটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্পেই টেন্ডার শেষ হয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, যা ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হবে।
এএ