চলতি অর্থবছরের জন্য পণ্য ও সেবা খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৭ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় যা ৭০০ কোটি ডলার বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার। মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্য খাতের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, আর সেবা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৭০০ কোটি ডলার। বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রফতানি আয়ের এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে অস্থিরতার মধ্যেই চলতি অর্থবছর রফতানি গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ১০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। এতে সাহস জোগাচ্ছে গত অর্থবছরের রেকর্ড পরিমাণ রফতানি। মহামারীর মধ্যে আগের অর্থবছরে ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃত রফতানি ৬০ বিলিয়নের বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। আর সেবা খাতে গত অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
পণ্য ও সেবা খাত মিলিয়ে ৫১ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয় মোট ৬০ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের রফতানির তুলনায় ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে বেশি। বাংলাদেশের রফতানির ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ।
কভিড মহামারীর কারণে প্রায় দুই বছর অর্থনৈতিক সংকোচন চলে বিশ্বজুড়ে। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের ফলে ক্রেতা দেশগুলোয় এখন ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সে কারণেই রফতানিতে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি এসেছে বলে মনে করেন টিপু মুনশি। তবে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে করোনার প্রকোপ আবারো বৃদ্ধি, ইউরোপে চলমান দাবদাহ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতিসহ অন্য চ্যালেঞ্জগুলোও বিবেচনায় নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, এসব প্রতিকূল পরিবেশের কারণে রফতানিতে ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। তার পরও আমরা আমাদের ক্যাপাসিটি, এফোর্ট, শ্রমিক, উদ্যোক্তা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কয়েকটা সেক্টর ভালো করছে। আইসিটির ক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী। চামড়া পণ্যেও ভালো করতে শুরু করেছি। হোম টেক্সটাইলেও ভালো করছি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থাকার পরও সবকিছু মিলিয়ে আমরা আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা, তা অর্জন করতে পারব বলেও আশাবাদী।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক আইটেম আমাদের টার্গেট মতো এগোচ্ছে না। তার পরও কোথাও নেগেটিভিটি নেই, পজিটিভভাবেই এগোচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে ভীতি অনেকদিনের। কিন্তু গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। গার্মেন্টস সেক্টরের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা ২০০৮ সালে শুনেছি, তৈরি পোশাক খাত খারাপ হবে, কোটা চলে যাবে। কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি। এছাড়া আমাদের কৃষি খাত, চামড়া খাত, পাট খাত, হোম টেক্সটাইল খাতের রফতানি এরই মধ্যে খাতপ্রতি ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। আইসিটি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ প্রায় ৮-১০টি খাতের রফতানি বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, আইসিটিকে এবার বর্ষ পণ্য করা হয়েছে। এ সেক্টর নিয়ে আমরা ভীষণ আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী আশা করেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে আইসিটি থেকে। আমরা যদি সেখানে যেতে পারি, তাহলে ২০২৫ সালে আমরা ৮০ বিলিয়ন ডলার রফতানির যে কথা বলেছি সেটা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম আহসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) নুসরাত জাবীন বানুসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও রফতানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন।