দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মোঃ এনামুর রহমান বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যার প্রকোপ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সরকার নদীর তলদেশ খননের মাধ্যমে গভীরতা বৃদ্ধিতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও আরো এক হাজার মুজিবকিল্লা ও এক হাজার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করবে সরকার ।
প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ঢাকায় ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা: শিক্ষণীয়, করণীয় ও পুনর্বাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায এসব কথা বলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এবং দৈনিক কালের কণ্ঠ যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, ব্র্যাকের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক সাজেদুল হাসান, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবৃন্দ।লেখক-সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১২২ বছরের ইতিহাসে এত ভয়াবহ বন্যা দেখা যায়নি। সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জায়গা পানির নিচে ছিল। এবারের বন্যা মোকাবেলায় উদ্ধার কাজের জন্য আমাদের ৬০টি নৌকা প্রস্তুত ছিল। এবারের বন্যার পরে আমরা আরও চারশটি নৌকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। বন্যায় আশ্রয়ের জন্য ৫৫০ মুজিবকিল্লার প্রকল্প ছাড়াও আরও ১ হাজার মুজিবকিল্লা ও ১ হাজার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র বানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে ৪০টি বন্যাপ্রবণ জেলায় বন্যার এমন ভয়াবহতা আর দেখা যাবে না। পরিশেষে সবাই মিলে যদি কাজ করা যায়, দুর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম বলেন ‘সাধারণ মানুষকে দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্পৃক্ত করতে হবে। তখন সাধারণ মানুষের কাজ হয়ে উঠবে অসাধারণ। প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মের প্রয়োগ যদি আমরা ঠিকমতো করতে পারি তাহলেই এমন ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা সম্ভব।’
গোলটেবিল আলোচনায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে -
ব্র্যকের জেন্ডার জাস্টিস এবং ডাইভার্সিটি কর্মসূচির মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হতে হবে জেন্ডার সংবেদনশীল। ত্রাণের সাথে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংযুক্ত করতে হবে। এছাড়া এই সময় গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য আলাদা নৌকার ব্যবস্থা রাখা উচিত। বন্যায় আক্রান্ত এলাকার নারীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন। তাদের জন্য মনোসামাজিক সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।’
গণমাধ্যম প্রতিনিধি নাজনীন মুন্নি বলেন, ‘মানুষ প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শহরে আসে আশ্রয়ের জন্য। কিন্তু শহরই বন্যায় প্লাবিত থাকে। শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলে তা শহর রক্ষা করবে, মানুষ সেখানে আশ্রয়ও নিতে পারবে। প্রত্যেক বছর বন্যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। সরকার থেকে প্রতিবছরই তাদের ঘর মেরামত করা হয়। আমরা যদি তাদের দুর্যোগ সহনশীল পাকা বাড়ি করে দিতে পারি, তাহলে তারাই তাদের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে পারবে। সেটাই এক একটা আশ্রয়কেন্দ্র হবে। এই বছর ত্রাণে শিশুখাদ্য পরিলক্ষিত হয় নি। সেটাও যুক্ত করা প্রয়োজন।’
এম জি