কনটেইনার ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে রেলওয়ের আয় বাড়ানোর নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুরের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোসহ (আইসিডি) দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে কনটেইনার পরিবহন আগের চেয়ে ১০ গুণ বাড়াতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ‘রেলওয়ে কনটেইনার সার্ভিস করপোরেশন’ নামে পৃথক একটি কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিষয়টি শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উঠবে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া পণ্যের মাত্র ৫ শতাংশ কনটেইনারের মাধ্যমে পরিবহন করে রেলওয়ে। বাকি ৮০ শতাংশ সড়কপথে এবং ১৫ শতাংশ নৌপথে পরিবহন করা হয়।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন বলেন, কনটেইনার ও মালামাল পরিবহনের জন্য ‘রেলওয়ে কনটেইনার সার্ভিস করপোরেশন’ নামের নতুন কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। প্রস্তাবটি আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে। এরপর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধন করে নতুন কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আশা প্রকাশ করে বলেন, কোম্পানির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর রেলপথে কনটেইনার পরিবহন অনেক বেড়ে যাবে। এতে মহাসড়কের ওপর ভারী গাড়ির চাপ কমবে এবং সড়ক কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে রেলের আয়ও অনেক বাড়বে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য ১৯৮৭ সালে কমলাপুরে আইসিডি নির্মাণ করা হয়। এ জন্য ট্রেনের পাঁচটি রেক (ইঞ্জিন ও ৩০টি ওয়াগন নিয়ে একটি রেক) ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে রেলপথে কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধি না পাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপ বেড়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক রেলপথে কনটেইনার পরিবহনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, একসময় নৌ ও রেলপথে পণ্য পরিবহন করা হতো। এখন এ দুটি পথ মৃতপ্রায়। রেলপথ মন্ত্রণালয় বন্দরের কনটেইনার পরিবহন বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে সড়ক ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমে যাবে। রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকবে।
এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে গোমতী ও মেঘনা সেতুর কাছে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন পরিমাপের জন্য ডিজিটাল এক্সেল লোড কন্ট্রোল যন্ত্র স্থাপিত হবে। এতে করে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে। ফলে রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহন আবার বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬ সাল) ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মাত্র ৩৮ হাজার ৭৮১টি কনটেইনার পরিবহন করে রেলওয়ে আয় করে ৪০ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এই ছয় মাসে কনটেইনার ওঠানামা হয় ১০ লাখ ৪৯ হাজার, যার মাত্র প্রায় ৪ শতাংশ রেলওয়ে পরিবহন করে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৩৪৩টি কনটেইনার পরিবহন করে রেলওয়ে আয় করে ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে বন্দরে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার কনটেইনার ওঠানামা হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮১ হাজার ৯৩০টি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার আইসিডিতে পরিবহন করা হয়। পরে ইঞ্জিনের সংকটসহ নানা কারণে রেলপথে কনটেইনার পরিবহন কমতে থাকে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বেশির ভাগ অংশই এখন ডাবল লাইনে (বিদ্যমান একটি লাইনের পাশে আরেকটি লাইন) রূপান্তর করা হয়েছে। এতে রেলপথের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেনের গড় পরিচালন সময় ২২-২৪ ঘণ্টা। এখন বেশির ভাগ অংশ ডাবল লাইন হয়ে যাওয়ায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের পরিচালন সময় সাত-আট ঘণ্টায় নামিয়ে আনা সম্ভব। ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মালামাল পরিবহন করতে পারবেন।
সানবিডি/ঢাকা/আহো