প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, শুধু পাবলিক সেক্টর নয়, প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) পদ্মা সেতু ও পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে দেশের শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের পর যে পদক্ষেপটি এখন নিতে হবে, তা হলো আরও বিনিয়োগের জন্য অর্থ জোগাড় করা। এই বিনিয়োগ প্রাইভেট সেক্টর থেকে আসা উচিত। এখানে পাবলিক সেক্টরের ভূমিকা রয়েছে। তা হলো অবকাঠামোগত সহায়তা দেয়া। রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করা। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টর এই সুযোগগুলো গ্রহণ করে বিনিয়োগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে না।’
ড. মসিউর বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক না হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধতা চলে আসে। অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা চলে আসে। অর্থনীতির সমৃদ্ধি প্রাইভেট সেক্টরের প্রকৌশলে গড়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগকারীদের হাতে মূলধন নিশ্চিত করতে হবে।’
মূলধন জোগাড় ও বিনিয়োগের উপায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা সঞ্চয় করে তাদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করা যায়। যাদের কাছে মূলধন আছে তাদের সবাইকে সেরা উদ্যোক্তা বা সম্পদ ব্যবস্থাপক হতে হবে এমন নয়। কিছু মধ্যস্থতাকারী থাকবে, যারা এই সম্পদ মজুত করবে। এটিকে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এটাই মধ্যস্থতাকারী এবং ফিন্যানশিয়াল মার্কেটের ভূমিকা।’
আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের দায়িত্ব পালনে ফিডুশিয়ারী (জিম্মাদার) রেসপনসিবিলিটি যথাযথভাবে পালন করার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ফিডুশিয়ারি রেসপনসিবিলিটির মানে হলো, অন্যের টাকা বিনিয়োগ করলে সেটার মুনাফা যেন তাদের প্রত্যাশা পূরণ করে।’
দেশের বন্ড মার্কেটকে আরও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা। বলেন, ‘বন্ড মার্কেটের ওপরে আমাদের আলোচনা বলে দেয় অনেক রিসোর্সেস আছে এটাকে মবিলাইজ করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্রাউড ফান্ডিংয়ের কথা বলেছি। এর অর্থ হলো অনেক মানুষ মিলে ছোট ছোট অঙ্কের অর্থ জোগান দেয়া। ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প মূলধন নিয়ে শুরু করে, কিন্তু ওই টাকা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বড় হয়ে উঠছে। এই টাকা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আরো সম্প্রসারণ করে। কিন্তু এসব অর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল উৎপাদন, কৃষি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ হয় না।’
ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘এই ক্রাউড ফান্ড মবিলাইজ করার একটা বড় সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে ইনফরমাল সেক্টরকে ফরমাল সেক্টরে রূপান্তরিত করা যাবে। ফরমাল সেক্টর বিস্তৃত করা গেলে রেভিনিউ আদায় বেড়ে যাবে সরকারের। অর্থনীতিতে উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি হবে।’
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রীন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসির এ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রফিকুল ইসলাম সেমিনারে । প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া। মডারেটর হিসেবে ছিলেন একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানের শেষে ভোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন গ্রীণ ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী।