রাশিয়া ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের মধ্যে শস্য রফতানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে গত ২২ জুলাই জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি চুক্তিতে সই করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এ চুক্তির ফলে খাদ্যশস্য নিয়ে জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে গমের দাম। এমনটাই জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। দেশেও পাইকারি পর্যায়ে দাম কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা দাম ২ হাজার ১শ’ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭শ’ টাকায়। খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে আগস্টের মাঝামাঝি।
দেশে গম আমদানির অন্যতম উৎস রাশিয়া ও ইউক্রেন। এ কারণে ওই চুক্তির ফলে গমের দাম আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাব বলছে, গত এক বছরে আটা-ময়দার দাম বেড়েছিল ৫০ থেকে ৫৬ ভাগ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কৃষ্ণসাগরের বন্দর দিয়ে শস্য রফতানি আগস্টের মাঝামাঝিতে আবার চালু হতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ইউক্রেন থেকে সরাসরি বাংলাদেশে গম আসবে। এতে আমাদের গমভিত্তিক যাবতীয় খাদ্যের দামও কমতে শুরু করবে।
সূত্র জানিয়েছে, ভুট্টা ও ভোজ্যতেলের দামও কমবে। ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সূর্যমুখী তেল রফতানিকারক দেশ। এ তেল বাজারে বেশি এলে সয়াবিন এবং পাম অয়েলের দাম কমবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইউক্রেনীয় বন্দর-শহর ওডেসা থেকে একটি করিডোর খোলার ব্যাপারে মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে কাজ করছে আঙ্কারা। এর আগে মার্চে তুরস্কের ভূমধ্যসাগরীয় শহর আনতোলিয়াতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করে তুরস্ক।
এরই ধারাবাহিকতায় তুরস্কের ইস্তানবুলে বন্দর খুলে দেওয়ার চুক্তি সই হয়।
এদিকে এ চুক্তি সইয়ের পর দেশের বাজারে আটা-ময়দার দাম আর বাড়েনি। বিক্রেতারা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে দ্রুতই দাম কমতে শুরু করবে।
জানা গেছে, এই মুহূর্তে ইউক্রেনে দুই কোটি টন গম মজুত আছে। রাশিয়ার মজুত আরও বেশি। তবে কেউই তা রফতানি করতে পারছে না। চুক্তির বাস্তবায়ন হলে ওই মজুত আসতে শুরু করবে বাজারে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চুক্তিটি বাংলাদেশের অর্থনীতির পালে নতুন হাওয়া দেবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপও কমবে। গমের দামের সঙ্গে চালের দামও জড়িত। তাই চাপ কমবে চালের ওপরও।
এদিকে সূত্র জানায়, রাশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ও সার আমদানি হতো দেশে। যুদ্ধের কারণে এতদিন বন্ধ থাকলেও চুক্তির ফলে আবার চালু হবে। এতে করে কৃষিতে সরকারের ভর্তুকির চাপও কমবে।
আরও জানা গেছে, চুক্তির ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জিটুজি ভিত্তিতে ৫ লাখ টন গম আমদানির পথ প্রশস্থ হয়েছে বাংলাদেশের।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যেই সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ চিঠি প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে। বেসরকারি আমদানিকারকরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, এটি নিঃসন্দেহে ভালো সংবাদ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই আমরা গম আমদানির বিকল্প দেশের সন্ধান করি। বেশি জাহাজভাড়া পরিশোধ করেও গম-ভুট্টা আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে আমদানির সুযোগ ফেরার ফলে আমাদের মধ্যেও স্বস্তি কাজ করছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর যদি কোনও অঘটন না ঘটে এবং চুক্তি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় তাহলে এর বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালউদ্দিন জানিয়েছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেশে আরও গম আসবে। এতে গমভিত্তিক খাদ্যগুলোর দাম কমবে।
এনজে