দেশের চাহিদা মেটাতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম ও ১ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানির ২টি প্রস্তাবসহ ৬টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২,৩০৮ কোটি টাকা।
বুধবার (২৭ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাবিরুল ইসলাম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২২তম সভা হয়েছে। কমিটির অনুমোদনের জন্য ৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২টি, কৃষি এতে মোট অর্থের পরিমাণ ২,৩০৮ কোটি ৫২ লাখ ৩২ হাজার ১৩৫ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ১,১০৯ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৩৫ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ঋণ ১,১৯৮ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাবিরুল ইসলাম বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতার আলোকে জরুরি খাদ্য নিরাপত্তা মজুদ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য তালিকাভুক্ত সরবরাহকারীদের কাছে আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হলে ১টি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স ইন্ট্রা বিজনেস প্রাইভেট লিমিটেড-এর কাছ থেকে এই গম সংগ্রহ করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৪৭৬.৩৮ মার্কিন ডলার হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০ টাকা। প্রতি কেজি গম-এর দাম পড়বে ৪৪.৭৬ টাকা।
সরাসরি ক্রয় চুক্তির আওতায় বেলগ্রেডের লিভিং স্টোন রিসোর্স-এর কাছ থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বেলগ্রেডের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএডিসির চুক্তির আওতায় এই সার আমদানি করা হবে। চুক্তি অনুসারে সারের দাম নির্ধারণ করে সার আমদানি করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১ কোটি মা.ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সারের দাম ১,১০০ মার্কিন ডলার।
সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর নিকট থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি করা হয়। সে চুক্তির ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনা হচ্ছে। প্রতি মেট্রিক টন ৫৬৭.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৭০ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫৯ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৯তলা অফিস ভবন এবং ১০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে কারিগরিভাবে ৩টি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পিএইএল, এনডিই এবং মীর আকতারের নাম সুপারিশ করে। কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৩২৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সভায় তিতাস গ্যাস ফিল্ডের লোকেশন-‘ই’ এবং ‘জি’ তে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপনের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’ (২০২১ সালের সংশোধনী-সহ) এর আওতায় তিতাস গ্যাস ফিল্ডের লোকেশন-ই এবং জি তে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপনের কাজ ক্রয়ের জন্য সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ২টি আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। ২টি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিপিসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব জিকম ইক্যুইপমেন্ট প্রাইভেট লিমটেড, সিঙ্গাপুর এবং এজি ইক্যুইপমেন্ট কোম্পানি, ইউএসএ-এর কাছ থেকে ওয়েলহেড কম্প্রেসারটি সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪০৯ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৮০৮ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সিলেট ১০ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ প্রকল্পের কূপ খনন অপারেশন, মালামাল, তৃতীয় পক্ষীয় প্রকৌশল সেবা ও পূর্ত কাজ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত দুটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে যা কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিপিসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সাইনোপেক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম সার্ভিসেস করপোরেশন, চায়না এর কাছ থেকে সেবাটি নেওয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৪৯ কোটি ১০ লাখ ৭৭৭ টাকা।
এএ