দীর্ঘ দিনের জটিলতার অবসান: বিএসইসি চেয়ারম্যান
মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ায় কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে: বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে বড় ভূমিকা রাখবে: বিএমবিএ সভাপতি
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমার জটিলতার সমাধানে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে শেয়ারের ক্রয়-মূল্যের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ (Exposure to Capital Market) করা হবে। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র মতে, এর আগে গত ১৭ জুলাই পুঁজিবাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেই বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে গত ২ আগস্ট, ২০২২ বিষয়টি পরিস্কার করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
চিঠি বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৬ এর ক ধারায় ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোন কোম্পানির শেয়ার ধারণের হিসাবায়নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা (Exposure to Capital Market) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ক্রয়কৃত মূল্যকেই বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারমূল্যে বিনিয়োগসীমা গণনা হয় বলে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে না। কারণ বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগসীমা গণনা হলে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলেই তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় ব্যাংকগুলো, যা ব্যাংকগুলোর দিক থেকে পুঁজিবাজারে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির পথে অন্যতম বাধা। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা দূর হওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও সংরক্ষিত আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা–সম্পর্কিত ধারার ব্যাখ্যা ও মতামত জানতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছিলো। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বিষয়টিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মতি দিলে তা দ্রুত বাস্তবয়ন হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদারতায় দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে সহায়ক হবে। কারণ এতোদিন কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারতো না। শেয়ারের দাম বাড়লেই পুঁজিবাজারে বিক্রয়ের চাপ চলে আসতো। ফলে বাজারে এক ধরণের অস্থিরতা শুরু হয়ে যেত। এখন আর সেটি হবে না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির ফলে পুঁজিবাজারের দীর্ঘ দিনের জটিলতার অবসান হলো। এখন পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারবে।
পূর্বে যা ছিলো:
[২৬ক। (১) ধারা ২৬ এর বিধান সাপেক্ষে, কোন ব্যাংক-কোম্পানী অন্য কোন কোম্পানীর শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে নিমণবর্ণিত পরিমাণের অধিক শেয়ার ধারণ করিবে না, যথা:-
(ক) ধারণকৃত শেয়ার বাজারমূল্যে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস এর মোট পরিমাণের পাঁচ শতাংশ,
(খ) উক্ত কোম্পানীর আদায়কৃত মূলধনের দশ শতাংশ: তবে শর্ত থাকে যে, এই আইন কার্যকর হইবার তিন বৎসরের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংক-কোম্পানী এমনভাবে উহার পুঁজিবাজার বিনিয়োগ কোষ পুনর্গঠন করিবে যাহাতে ধারণকৃত সকল প্রকার শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রের মোট বাজারমূল্য এবং পুঁজিবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত নিজস্ব সাবসিডিয়ারী কোম্পানী বা কোম্পানীসমূহ বা অন্য কোন কোম্পানী বা কোম্পানীসমূহে প্রদত্ত ঋণসুবিধা, এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত কোন প্রকার তহবিলে প্রদত্ত চাঁদার পরিমাণ সমষ্টিগতভাবে উহার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস এর মোট পরিমাণের ২৫ (পঁচিশ) শতাংশের অধিক না হয়।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোন ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজার কোন কোম্পানীর পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট থাকেন বা উহাতে তাহার কোন স্বার্থ থাকে, তাহা হইলে, এই আইন প্রবর্তনের তারিখ হইতে ১ (এক) বৎসর মেয়াদ অতিক্রান্ত হইবার পর, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজার উক্ত কোম্পানীতে কোন শেয়ার ধারণ করিতে পারিবে না।
(৩) কোন ব্যাংক-কোম্পানী উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিলে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনূর্ধ বিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে এবং যদি উক্ত লংঘন অব্যাহত থাকে, তাহা হইলে উক্ত লংঘনের প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডনীয় হইবে।