সহজ যোগাযোগ ও দ্রুত পণ্য পাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর তুলা আমদানিতে ভারতের উপর নির্ভরতা বেড়েছে কয়েকগুণ। একে পুঁজি করে তুলা আমদানিকারকদের নানা বিড়ম্বনায় ফেলছে ভারতের রপ্তানিকারকরা।
আমদানিকারকরা জানান, এলসির বিপরীতে ঠিকমতো পণ্য শিপমেন্ট করছে না ভারত। একবারের জায়গায় ২-৩ বারে শিপমেন্ট দেয়। কখনো কখনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আবার বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে অযৌক্তিক দর বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে রয়েছে নিম্নমানের তুলার সরবরাহের অভিযোগ নিষ্পত্তি নিয়েও নানা তালবাহানা। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের।
কোনো একক দেশের প্রতি এমন নির্ভরতার কারণেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ২০২১ সাল নাগাদ তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তা পূরণ হওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারত নির্ভরতার কারণ হিসেবে আমদানিকারকরা বলছেন, দূরত্ব কম হওয়ায় ভারত থেকে তুলা আমদানিতে পরিবহন খরচ কম পড়ে। তাছাড়া দ্রুত তুলা পাওয়া যায়। মানও মোটামুটি সন্তোষজনক। এসব কারণে তুলা আমদানিতে ভারতের উপর নির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু এটিকে ব্যবহার করে ‘প্রতারণা’ করছে ভারতের রপ্তানিকরকরা।
বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ তুলা আমদানি হয়, বর্তমানে তার প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। অথচ গত ৬ বছর আগেও ভারতে থেকে মোট আমদানির ২২ শতাংশ তুলা আমদানি করা হতো।
বিটিএমএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের স্পিনিংসহ অন্যান্য খাতে বছরে মোট তুলার চাহিদা রয়েছে ৬০ লাখ বেল। তবে দেশে উৎপাদন মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার বেল। যা চাহিদার তুলনায় মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪৮ লাখ বেল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
দেশে তুলা আমদানির গত ৬ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০ সালে দেশে মোট তুলা আমদানি করা হয় ৫০ লাখ বেল। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১০ লাখ বেল। অর্থাৎ মোট আমদানির ২২ শতাংশ। মাঝে কয়েক বছর আমদানির পরিমাণ কমলেও ২০১৫ সালে এসে দেশে মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ লাখ বেলে। এ সময়ে ভারত থেকেও তুলা আমদানির পরিমাণ বেড়ে হয় ৩০ লাখ বেল। যা মোট আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট চাহিদার ৬০ শতাংশের বেশি তুলা ভারত থেকে আমদানি হতে পারে। ভারত ছাড়াও চীন, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাদশা মিয়া বলেন, দেশে যা উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে এতো বড় শিল্পের চাহিদা মিটছে না। তাছাড়া মান নিয়েও সমস্যা আছে। ফলে নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যুক্তসংগত কারণ ছাড়াই ভারত হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে গড়িমসি করে। এতে অনেক সময় ব্যবসায়ীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
“বিষয়টি নিয়ে অনেকবারই নীতিনীর্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তেমন ফল আসেনি। চলতি মাসের ১২ তারিখ এ বিষয়ে ঢাকায় একটি বাংলাদেশ-ভারত কটন ফেস্ট নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, এ পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন আসবে।”
তবে বিকল্প উৎসের সন্ধানে আগামী মাসে আফ্রিকা যাচ্ছি জানিয়ে বিসিই সভাপতি বলেন, সেখানকার তুলার মানও ভালো। প্রতিযোগিতামূলক দাম ও সময়ের বিষয়টি অনুকূলে থাকলে সেখান থেকে তুলা আনা হবে।
বাংলাদেশ-ভারত কটন ফেস্ট উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরীও ভারত থেকে তুলা আমদানি বিষয়ে একই তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ভারত থেকে তুলা আমদানি করতে গিয়ে আমাদের মাঝে মাঝে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। অনেক সময় এমন হয়, তুলা আমদানির জন্য আজ এলসি খোলা হলো, পরের দিন বিশ্ববাজারে তুলার দাম কমে গেল। এক্ষেত্রে আমাদের চুক্তিবদ্ধ দামেই পণ্যটি কিনতে হয়। অথচ এলসির পর যদি দাম বেড়ে যায় তখন ভারতের রপ্তানিকারকরা নানা তালবাহানা শুরু করে। তারা বলে, ঠিকাদার পাওয়া যাচ্ছে না, জাহাজ ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর একবারের জায়গায় ২-৩ বারে শিপমেন্ট দেয়।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় তুলা আমদানিতে ভারত নির্ভশীলতা কমানোই একমাত্র সমাধান নয়। বরং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান জরুরি। পাশাপাশি আমদানিতে বিকল্প উৎসের অনুসন্ধান করতে হবে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো