কৃমির প্রতিষেধক তৈরিতে জন্য নতুন গবেষণা শুরু
প্রকাশ: ২০১৬-০৩-২০ ১২:১৬:৫৩
কৃমির টিকা তৈরির উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানীরা নতুন এক গবেষণা শুরু করেছে। এই গবেষণায় কিছু স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবক বেছে তাদের কৃমি দ্বারা সংক্রমিত করা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, গবেষণাটি সফল হলে কৃমিঘটিত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা অ্যানিমিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হবে। কৃমি গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের একজন জেসিকা।
তিনি বলেন, “গবেষণার জন্য আমার শরীরে কৃমি প্রবেশ করানো হবে। বিষয়টি শুনলে হয়তো কিছুটা ঘৃণা লাগতে পারে। পাকস্থলীতে ৫০ টি কৃমি প্রবেশ করানো মানুষজনের কাছে খুব পছন্দের বিষয় নয়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমার কাছে এটা কোন সমস্যাই মনে হচ্ছে না”।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি বেথোনি বলেন, ‘কৃমি দ্বারা কোন সুস্থ মানুষকে সংক্রমিত করা হয়তো অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে গবেষকরা কৃমি সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবেন। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ব্রাজিল, আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে কৃমির সংক্রমণ নিয়মিত ঘটনা। এসব এলাকার সমস্যা হলো, যখনি কারো কৃমি সংক্রমণ হয়, তখনই সে পুষ্টির দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর কৃমিও তাদের খাদ্য হিসেবে তাদের রক্ত টেনে নেয়।
অপুষ্টি এবং অন্যান্য কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর নতুন প্রতিষেধক পরীক্ষা করা কঠিন। কিন্তু স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর কৃমির কি প্রভাব পড়ছে, সেটি দেখার মাধ্যমে গবেষকরা এর টিকা আরো সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে পারে।
একটি ব্যান্ডেজে কৃমির লার্ভা সংযুক্ত করে সেটি স্বেচ্ছাসেবকদের হাতের চামড়ার ওপর রেখে সেটি তাদের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। কৃমির প্রভাব পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন ডোজের কৃমি দ্বারা সংক্রমিত করা হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন বলেন, ‘আমি মাত্র কৃমির ডোজ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলাম। আমার হাত কিছুটা চুলকাচ্ছে, কিন্তু এছাড়া আর কিছু বুঝতে পারছি না’।
গবেষকদের একজন অধ্যাপক জন হডোন বলেন, “এখন আমরা কৃমির মাত্রা বাড়াচ্ছি যাতে এটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যখন সংক্রমণের মাত্রা যথেষ্ট থাকবে, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে সীমিত”।
এই গবেষণার মাধ্যমে টিকা পরীক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো মানবশরীরে কৃমি সংক্রমণের একটি মডেল তৈরি করা যাবে। একইসঙ্গে এই পরজীবীদের কিভাবে ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেটাও জানা যাবে।
এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর খুব সামান্য কিংবা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই পড়ে না। চার মাস পর সাধারণ কিছু ওষুধ খেলেই কৃমি দূর হয়ে যায়। কিন্তু এই গবেষণা সফল হলে কোটি কোটি মানুষ খুব বড় ধরনের উপকার পেতে পারে।