দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ এক্সচেঞ্জেই ৩৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সেলফ লিস্টিং আইনের খসড়াও কমিশনে জমা দিয়েছে। তাই, কাজের অগ্রগতি জানাতে এবং পরামর্শ নিতে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসই। সম্প্রতি বিএসইসির কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে ডিএসই বলেছে, ব্লক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত ৩৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করার বিষয়ে অপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। আলোচনার জন্য বিনীতভাবে আপনাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় চাচ্ছি।
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে ৩৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এ লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা চলতি বছরের ১০ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরবর্তী ফেব্রুয়ারিতে ডিএসই এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করে।
এদিকে, নিজ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্তর বিষয়ে সেলফ-লিস্টিং রেগুলেশন, ২০২২ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের মার্চে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান। কমিটির সদস্যরা হলেন—নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পরিচালক মো. আবুল কালাম, অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলী এবং যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক (সদস্য সচিব)। কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে মতামতের ভিত্তিতে সেলফ-লিস্টিং রেগুলেশন প্রণয়নের কাজ চলছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবসা পরিচালনা থেকে ব্রোকারদের প্রভাব কমাতে ২০১৩ সালে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন করে বিএসইসি। ওই আইন অনুযায়ী আলোচ্য বছরেই দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ মুনাফাকেন্দ্রিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ওই সময়ে ডিএসইর পুরো সম্পদের ভিত্তিতে (১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রায় ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ শেয়ার পেয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ২০১৮ সালে ডিএসই ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে বিক্রি করেছে। ৩৫ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। ৩৫ শতাংশ হিসেবে ডিএসইতে মোট ৬৩ কোটি ১৩ লাখ শেয়ার সংরক্ষিত আছে।
স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি আইপিওর বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় হবে। তবে, স্টক এক্সচেঞ্জের বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় যোগ্য বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগই অংশ নিতে পারবে না। এর কারণ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে বলা আছে, প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডার এবং তাদের সংশ্লিষ্টদের কেউই এর আইপিওর দর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার যোগ্য হবে না। এ অবস্থায় স্টক এক্সচেঞ্জের বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পাওয়া কষ্টকর হতে পারে। আবার শেয়ার সংখ্যা বেশি হলে বেশি দামে শেয়ার কেনার জন্য পর্যাপ্ত ক্রেতা নাও মিলতে পারে। তাই ব্লক হিসাবে থাকা ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য আলাদা বিধি ও প্রবিধিমালা করা হয়েছে।
এছাড়া, যেকোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ডিএসইর কাছে আবেদন করতে হয়। কিন্তু, নিজস্ব পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ডিএসইকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে আবেদন করতে হবে। এ সংক্রান্ত সব অনুমোদন কেবল বিএসইসি দেবে। তালিকাভুক্তির পর অন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো কমপ্লায়েন্স মেনে সব ধরনের তথ্য জমা দেবে ও প্রকাশ করবে। তবে, বিদ্যমান আইনে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।