জানুয়ারিতেই চার দেশে চলবে বাস
প্রকাশ: ২০১৫-১০-১৫ ১৮:৩০:২১
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে সড়কপথে যান চলাচল আসছে জানুয়ারি থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে। এই চার দেশের অংশের সড়ক পথের সার্ভের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।
এছাড়া ভারতের চার সদস্যের একটি বিবিআইএন-এর প্রতিনিধি দল গত ১ অক্টোবর আগরতলা-আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম ও ঢাকা হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশেরও সার্ভের কাজ শেষ করেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানে আগামী ২৯ অক্টোবর মোটর র্যালিও করবে। এ ব্যাপারে ৫ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দুপুরে বিবিআইএন সার্ভে টিমের সদস্যরা সচিবালয়ে সভা করে একমত হয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চলতি অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সুবিধাজনক সময়ে ‘প্যাসেঞ্জার ট্রায়াল রান’ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জানুয়ারি থেকে ৪ দেশের মধ্যে সড়কপথে এই রুটে নিয়মিত পরিবহনের চলাচল শুরু হবে বলে।’
গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রায়াল রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। রুটগুলো হলো- বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা-হাটিকুমরুল-রংপুর-বুড়িমারি রুট, চেংড়াবান্ধা (ভারত)-শিলিগুড়ি (ভারত)–জয়গাঁও (ভারত) রুট, ফুয়েন্টশোলিং (ভুটান)-থিম্পু (ভুটান) রুট, ভুটানের থিম্পু থেকে চট্টগ্রাম-থিম্পু (ভুটান)-ফুয়েন্টশোলিং (ভুটান) রুট, জয়গাঁও (ভারত)-শিলিগুড়ি (ভারত)-চেংড়াবান্ধা (ভারত) ও বুড়িমারি-রংপুর-হাটিকুমরুল-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট।
জানা গেছে, ভারত সরকারের মনোনীত আয়োজক প্রতিষ্ঠান কলিঙ্গ মোটর স্পোর্টস ক্লাব বিবিআইএনের র্যালিতে যোগদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে দুই জন সরকারি কর্মকর্তা এবং বিআরটিসি ও এফবিসিসিআই থেকে ২ জন বেসরকারি প্রতিনিধির সমন্বয়ে চার সদস্যের একটি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সংখ্যা আট জনে উন্নীত করার জন্য ইতোমধ্যে ভারতের আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিবিআইএনের র্যালিতে কলিঙ্গ মোটর স্পোর্টস ক্লাবের ২০টি গাড়ি অংশগ্রহন করবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিবিআইএন দেশগুলোর প্রতিনিধিরা যান চলাচলের জন্য ১৩টি রুট চিহ্নিত করেছেন। এগুলার মধ্যে ভারত ও নেপালের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচটি রুট রয়েছে। ভারত হয়ে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে যান চলাচলের জন্য দুটি করিডরের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত হয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে যান চলাচলের জন্য দুটি করিডরের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিবিআইএন দেশগুলো ইতোমধ্যে রুটগুলোতে ফাস্ট ট্র্যাকে বিরতিহীন গাড়ি চলাচলের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট’ (এমভিএ) সই হয় গত ১৫ জুন। এর আওতায় বাধা ছাড়াই পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল করতে পারবে এই চার দেশে। দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে নিয়মিত বাস-ট্রাক চলাচল করবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িতেও চার দেশ ভ্রমণ করা যাবে। কত ট্যাক্স দিতে হবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারের লক্ষ্যে সাউথ এশিয়া সাব-রিওজনাল ইকোনোমিক করপোরেশন (সাসেক) গঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। সাসেক প্রকল্পভিত্তিক একটি উদ্যোগ, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাসেকের চারটি সদস্য দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল ১৯৯৬ সালে এ অঞ্চলের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সাউথ এশিয়া গ্রোথ কোর্ডারজেল গঠন করে। পরে ২০১৪ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাসেক ট্রেড ফ্যাসেলিটিশন অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপকে সাসেকের সদস্য দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে সাসেকের সদস্য দেশের সংখ্যা ৬-এ উন্নীত হয়।