দাতব্য সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশীপ’ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ সম্প্রতি, কুড়িগ্রাম জেলার ঘুঘুমারী চরের ৭৫০ বাসিন্দার জন্য একটি পরিবেশগত প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ঘুঘুমারী চরে ৫৪ কিলোওয়াট সোলার মাইক্রো-গ্রিড ও ৬০ টি নলকূপ স্থাপন এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদানের পাশাপাশি প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও টেকসই অর্থনীতি নিশ্চিতে কাজ করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।
চরের ভৌগলিক অবস্থান, নানাবিধ পরিবেশগত সমস্যার পাশাপাশি এখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানীয় জল এবং অন্যান্য অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। এই অবস্থায় একটি সাশ্রয়ী সোলার মাইক্রো-গ্রিড স্থাপনের মাধ্যমে ১৫০টি পরিবার প্রয়োজনীয় ও টেকসই শক্তি ব্যবহার করতে পারবে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-ফ্রেন্ডশীপ সোলার ভিলেজ প্রকল্পটি আঞ্চলিক জলবায়ু বিবেচনা করে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রয়োজনে স্থানান্তরযোগ্য। এর পাশাপাশি ৬০টি নলকূপ স্থাপন করে চরের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত এবং মাটির ক্ষয় রোধ ও কার্বন ফুটপ্রিন্টের ভারসাম্য বজায় রাখতে বৃক্ষরোপণ করা হবে। প্রকল্পটির শুরুর ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী এক দশকেরও বেশি সময় চরের মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয় এবং ফ্রেন্ডশীপ-এর পক্ষ থেকে সংস্থাটির ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুনা খান ঢাকায় অবস্থিত ফ্রেন্ডশীপ-এর প্রধান কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী; ফ্রেন্ডশীপ-এর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ও প্রধান মো: কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলদেশ-এর সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “বিশুদ্ধ পানি, সৌরবিদ্যুৎ এবং একটি সবুজ পরিবেশের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ঘুঘুমারী চরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে তাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই অত্যাবশ্যকীয় চাহিদাগুলোর যোগানের ব্যবস্থা করে চরাঞ্চলের বাসিদাদের জলবায়ু বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে। ফ্রেন্ডশীপ-এর সাথে অংশগ্রহণ-এর মাধ্যমে দেশের এমন সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সহায়তা করে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
ফ্রেন্ডশীপ-এর ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুনা খান বলেন, “চরের অস্থায়ী ও অনিশ্চিত আবহাওয়ার কারণে স্থায়ীভাবে কোনো পাওয়ার গ্রিড স্থাপন সম্ভব না হলেও, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে বাসিন্দাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা মেটানো সম্ভব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চরের মানুষগুলো দীর্ঘসময় কাজ করতে পারবে, শিক্ষার্থীরা বেশি সময় অধ্যয়নের সুযোগ পাবে, পাশাপাশি রাত্রিকালীন সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, পণ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন সুবিধা লাভ করবেন।”
দীর্ঘ ১১৭ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-ই দেশের একমাত্র বহুজাতিক ব্যাংক। দীর্ঘদিন যাবত দেশের অগ্রগতির অংশীদার হিসাবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সাফল্য, সম্পদ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রবৃদ্ধিতে সাহায্যের লক্ষ্যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে আসছে। সাসটেনেবিলিটি ও সমতাকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যাংকটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও সাসটেইনেবিলিটিকে কেন্দ্র করে কমিউনিটি উদ্যোগের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জীবন, জীবিকা এবং পৃথিবীর সুরক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।
ফ্রেন্ডশীপ একটি আন্তর্জাতিক সমাজ-কল্যাণমূলক সংস্থা। গত ২০ বছর যাবত ফ্রেন্ডশীপ দেশজুড়ে প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। প্রতিটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্থাটি তাদের চারটি প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে থাকে; জীবন বাঁচানো, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু অভিযোজন এবং ক্ষমতায়ন।
এএ