ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একজন তরুণ, সফল শিল্পোদ্যোক্তা। উদ্যোমী, মেধাবী ও প্রকৌশলী শিল্পপতি হিসেবে ব্যবসায়ী সমাজের কাছে আদর্শ বিজনেস আইকন হিসেবে সমাদৃত তিনি। অল্প সময়ে তার পরিশ্রম, ত্যাগ, সততা, নিষ্ঠা ও সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেকে ব্যবসায়ী জগতে যেমন অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তেমনি রাষ্ট্রের কাছে হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বৃহৎ শিল্প স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তিনি বেকারত্ব দূরীকরণ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার ১৯৭৩ সালে ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ভেদুরিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল হান্নান হাওলাদার ও মাতা নুরজাহান বেগম। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার দ্বিতীয়।
শৈশব থেকেই অত্যন্ত শান্ত ও মিশুক প্রকৃতির ছিলেন আবু নোমান। তার আদব-কায়দা ও ভদ্রতায় প্রতিবেশীদের কাছে অন্তত এ বিষয়টি স্পষ্ট ছিল যে একজন সুমানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন তিনি। বাবা মায়েরও বুঝতে বাকি ছিলো না যে তাদের এই মেধাবী সন্তান পড়ালেখায় ভালো করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। সম্মান বয়ে আনবেন সমাজ ও দেশের জন্য। বাবা-মা’রও প্রত্যাশা ছিলো যে তাদের সন্তান দেশের মানুষের সেবা করবে সবটুকু উজার করে।
প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সবসময়ই ক্লাসে প্রথম ছিলেন আবু নোমান। প্রাথমিকে পড়েছেন উত্তর ভেদুরিয়ার কুলচরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে আবু নোমান ভর্তি হন ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের করিমগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এখানেও প্রতিটি শ্রেণিতে প্রথম ছিলেন তিনি। এই সাফল্যের পথ ধরে ১৯৮৮ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন আবু নোমান। পিতা-মাতা উভয়েই শিক্ষার প্রতি অনুরাগী হবার ফলে পড়ালেখার উত্তম পরিবেশ সৃষ্টি করেন তারা এবং তাদের তত্ত্বাবধানেই বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করে মাধ্যমিকেও সাফল্য অর্জন করেন তিনি।
মাধ্যমিক পাশ করার পর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখার জন্য রাজশাহীতে যান আবু নোমান। সেখানে মামার তত্ত্বাবধানে পড়ালেখা করেন তিনি। ভর্তি হন রাজশাহী সিটি কলেজে। উচ্চ মাধমিক পাস করার পর মেধার স্বাক্ষর রেখে আবু নোমান ভর্তি হন দেশের মেধাবীদের পীঠস্থান, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটে। পড়াশোনা করেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। এই সময়ে জড়িত হন ছাত্র রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে বুকে লালন করা পরিবারের সন্তান হিসেবে নিশ্চিতভাবে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র লীগই তার রাজনৈতিক, আদর্শিক ঠিকানা হয়ে ওঠে।
নব্বইয়ের দশকে বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক অবস্থান অতটা শক্তিশালী ছিলো না। ছাত্রলীগের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান। সেই পরিশ্রম ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৭ সনে ইউকসু নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দী হল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন তিনি।
তার সততা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, বন্ধুবৎসল আচরণে মুগ্ধ হন সবাই। সে কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাকে বিপুল সমর্থন করেন, ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন। কর্মজীবনেও তিনি মানুষকে ভালোবাসার যে শিক্ষা চর্চা করেন, সেই হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণের কারণেই দলমত নির্বশেষে সার্বজনীন ভালোবাসা ও সম্মানের অবস্থানে নিজেকে উন্নীত করেছেন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হওলাদার। ছাত্র-শিক্ষক, ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ, তরুণ, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমানকে একজন সজ্জন, দয়ালু, দানশীল মানবিক মানুষ হিসেবে জানেন এবং শ্রদ্ধা করেন।
আবু নোমান হাওলাদারের নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী অসাধারণ। তার মোহনীয় ব্যক্তিত্বই তাকে নেতৃত্বের স্থানে আসীন করেছে। তিনি এরিমধ্যে লালমোহন-তজুমদ্দিন এবং তার কর্মক্ষেত্রে প্রমাণ করেছেন তার জনপ্রিয়তা। দশ থেকে বারোটি বৃহৎ শিল্প পরিচালনা, এসব ভারী শিল্প কারখানাকে টিকিয়ে রাখতে যে দক্ষতা, যোগ্যতা, দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বের প্রয়োজন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমানের এসবের কোনোটিরই কমতি নেই। তিনি যেমন একজন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবেই একজন প্রতিভাবান ও সুব্যবসায়ী হিসেবে এদেশের শিল্পখাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
শিক্ষাজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, ব্যবসায়ী জীবনে সাফল্যের পর রাজনীতিতেও ঈর্ষণীয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের যোগ্যতায় বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একজন সফল মানুষ ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার। তার মতো প্রমাণিত মেধাবীদের পক্ষেই সম্ভব দেশের রাজনীতিতেও গুণগত পরিবর্তন সাধন করা।
বুয়েটের মেধাবীদের কাছে বিদেশ কোনও স্বপ্ন নয়। অনেকেই ইউরোপ, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়ে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন পেশায়। বুয়েট থেকে পাশ করা একজন মেধাবী প্রকৌশলী হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদারেরও সেই সুযোগ ছিলো। সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে পাস করে বের হওয়া একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বিদেশে চলে যাবার সুযোগ অবজ্ঞা করা নিশ্চয়ই সহজ কাজ নয়। কিন্তু দেশ, মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করে, নিজের আরাম-আয়েসের কথা বাদ দিয়ে দেশেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই বুয়েট প্রকৌশলী। তিনি মা ও মাটিকে ফিরিয়ে দিতে চান তার চেয়েও বেশি যতটুকু তিনি এই দেশ থেকে পেয়েছেন।
ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমানের জীবন পথও কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। ক্যারিয়ার ছিলো চ্যালেঞ্জিং ও বিপদসঙ্কুল। বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর একটি স্বনামধন্য বেসরকারি শিল্প গ্রুপে চাকরি করেন তিনি। কয়েক বছর চাকরি করে এই প্রকৌশলী সিদ্ধান্ত নেন- আর চাকরি নয়; এবার ব্যবসা করবেন তিনি।
শুরু করলেন উদ্যোক্তা জীবন। শুরুটা ২০০০ সালের দিকে। কিন্তু ব্যবসা তো এত সহজ নয়। এই অভিযাত্রায় আছে ঘাত-প্রতিঘাত, বন্ধুর পথ। আছে লাভ-লোকসানের কঠিন সব সমীকরণ। ব্যবসায় প্রয়োজন অসীম ধৈর্য, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা। জীবনের কঠিন সব চ্যালেঞ্জ উতরে আজকের অবস্থানে নিজেকে মেলে ধরেছেন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার। একজন সফল উদ্যোক্তা, নিষ্ঠাবান, সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে রাষ্ট্রকে কোটি কোটি টাকা কর প্রদান করেন তিনি। শিল্পখাতে নিজের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন তরুণ এই শিল্পপতি।
দু’দশকের ব্যাবসায়িক অগ্রযাত্রায় অর্জন আর সাফল্যের ঝুড়ি নিয়ে গর্ব করার অনেক কিছুই অর্জন করেছেন তিনি। সিআইপি মর্যাদা পেয়েছেন দু’বার। রাষ্ট্র ব্যবসায়িকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাদেরকেই মনোনীত করে যাদের অবদান বিশেষ সম্মানের সাথে স্বীকার করে রাষ্ট্র। যেসব বিবেচনায় একজন শিল্প উদ্যোক্তা সিআইপি মনোনীত হন:
এক. যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা দুই. যিনি রাষ্ট্রকে বড় অঙ্কের আয়কর দিয়ে থাকেন তিনি. যার ব্যবসায় বিনিয়োগের ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং এরফলে বেকারত্ব দূরীভূত হয় এবং যে উদ্যোগে দেশের মানুষের বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিত হয় এবং চার. যে ব্যবসার ফলে দেশ-বিদেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পায় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এসব বিবেচনায় একজন সফল উদ্যোক্তার দেশপ্রেম এবং সৎ ও জনকল্যাণমূলক ভূমিকার ফলেই একজন শিল্প উদ্যোক্তা সিআইপি মনোনীত হন। সিআইপিগণ দেশের বিশেষ নাগরিক হিসেবে সম্মানীত। তাঁর এই সম্মান ভোলা জেলার মানুষের জন্য বিশেষ সম্মান ও গৌরবও বটে!
ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার একজন সৎ, আদর্শবান, পরিশ্রমী এবং নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী। ছাত্রজীবন থেকে যোগ্য নেতা হিসেবে প্রমাণিত এই মানুষটি করোনাকালে ভোলার লালমোহন-তজুমদ্দিনে অসহায়ের সহায় হিসেবে আবির্ভূত হন। তার পক্ষে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়া হয় নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে। জাতির পিতার আদর্শের ধারক হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন, সবাইকে নিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত অর্থ নিহিত। এই মহৎ ভাবনা যাকে তাড়া করে ফেরে, তিনি একজন মানবিক মানুষ। আর মানবিক মানুষেরাই প্রকৃত মানুষ। নেতত্বের আসনে এমন প্রকৃত মানুষদের আসা উচিৎ যারা দায়িত্বকে ক্ষমতা নয়; মনে করেন আমানত।
এএ