বাংলাদেশ প্লানিং কমিশনের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেছেন, গত ৭ বছরে দেশের অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ে অর্থনীতির আকার আরো বৃদ্ধি পেতো যদি নাগরিক সামাজ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারতো। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের এ ধারা ধরে রাখতে ও আরো ভালো করতে নাগরিক সমাজকে দেশের সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। সোমবার রাজধানীর ফার্মগেট ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাজিজের (বিসিএএস) উদ্যোগে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ, প্যারিস চুক্তি ও নারীর সমতা’ বিষয়ে নাগরিক সমাজ সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম এসব কথা বলেন।
বিসিএএসের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ইউএনডিপির সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর পলাশ কান্তি দাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের অধ্যাপক হামিদুল হক, বিসিএএসের ফেলো ও পরিচালক ড. দ্বিজেন মল্লিক, বিসিএএসের ফেলো ওমর তারেক চৌধুরী, সিনিয়র ফেলো ও পরিচালক খন্দকার মাঈনুদ্দিন, খ্রিশ্চিয়ান এইডের প্রতিনিধি সিনিয়র প্রোগ্রামার ইশরাত শানমিন আকন্দসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, খ্রিশ্চিয়ান এইডের বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিক প্রতিনিধিরা।
সংলাপে ড. শামসুল আলম বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা তথ্যভিত্তিক ১১টি অগ্রগতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছি। তাছাড়া এটা বাস্তবায়নে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ ধরা হয়েছে। এটা পরিকল্পনা কমিশনেরই দেয়া। আগামী অর্থবছরে যে বাজেট আসবে সেখানে কমিশন দেয়া প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশই থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, দেশের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ধরা হয়েছে ১৭টি। আর এটা বাস্তবায়নে ১৬৯ টি টার্গেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা খুব শিগগিরই সব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের এসডিজি বাস্তবায়নে মাত্র ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় করা হয়েছে। এতো সামান্য অর্থ দিয়েও ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন হয়েছে। যা খুবই আশ্চর্য ব্যাপার। এক্ষেত্রেও যদি নাগরিক সমাজের ভূমিকা থাকতো, তাহলো আরো ভালো করা যেতো বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের বর্তমানে কাজ করছে সংবাদ কর্মীরা। তবে সব ক্ষেত্রে তারা তা পারে না। কারণ দেশের মিডিয়া জগত চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। আগের মতো মিডিয়ার ভূমিকা দেখা যায় না। তার পরেও তারা নাগরিক সমাজের চেয়ে অনেক সচেতন করে তুলছে দেশের জনগণকে। সরকারি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এক যোগ সিভিল সোসাইটিও এগিয়ে আসলে আরো ভালো করা যাবে।
সংলাপে পলাশ কান্তি দাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নাগরিক সমাজের ভূমিকা খুবই দরকার। সরকারের সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও সহায়তা ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন হবে। এ ক্ষেত্রে সেতু বন্ধনের কাজ করতে পারে সিভিল সোসাইটি।
নাগরীক সংলাপে কয়েকটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে কারিগরি অধিবেশনে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের ভূমিকা শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিসিএএসের ফেলো ড. আবু সাঈদ, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বাংলাদেশের প্রাপ্তি ও প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিসিএএসের গবেষক সামিয়া সাইফ, সবার জন্য জ্বালানি ও দরিদ্রদের জন্য টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিসিএএসের ফেলো ওমর তারেক চৌধুরী, নারীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নারীবান্ধব অভিযোজন বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিসিএএেসর সিনিয়র রিসার্স অফিসার জাকিয়া নানজনীন। সমাপনী অধিবেশনে এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা, প্রাপ্তি ও প্যারিস চুক্তির ওপর বক্তব্য রাখেন একশান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, এছাড়া সংলাপের সরাংশ তুলে ধরেন বিসিএএসের ফেলো ও পরিচালক ড. দ্বিজেন মল্লিক।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আতিক রহমান বলেন, সব মিলে দেশের এসডিজি বাস্তবায়ন ভালো হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, দেশের কোনো জনগণ এখন আর না খেয়ে থাকে না। এখন আর কেউ জুতা ও জামাবিহীন নয়। কোনো মানুষ না খেয়ে মারা গেছে এমন তথ্য বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও নাগরিক সমাজ স্বতঃস্ফূর্ত এগিয়ে আসলে দেশের অবস্থা আরো ভালো হবে। তিনি বলেন, যেকোনো দেশের পরিবেশ নষ্টকারী প্রধান উপাদান পলিথিন ও পলিস্টাইন। এটা কোনো দিন ধ্বংস হয় না। হাজার বছর হলেও এর অস্থিত বিলীন হয় না। আর এই পলিথিনের সর্বশেষ গন্তব্য হলো সমুদ্র।
সংলাপে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের ৩১.৫ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। এর মধ্যে বিভাগ ভিত্তিক রংপুরে সবচেয়ে (৪৬.২ শতাংশ) বেশি। আর সর্বনিম্ন চট্টগ্রামের দারিদ্র্যের হার ২৬.২ শতাংশ। সংলাপে জানানো হয়, বিশ্বে বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নেপাল ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের বাইরে। ৯০ শতাংশ মানুষ গ্যাস সুবিধার বাইরে রয়েছে। দেশের এতো সংখ্যক মানুষকে আরামদায়ক সুবিধাতো দূরের কথা ন্যূনতম সুবিধার আওতায় আনতে হবে।
সংলাপে আরো জানানো হয়, এসডিজি বাস্তবায়নে দেশের বেকার জনগণকে প্রপার কাজে লাগাতে হবে। তাদের কিভাবে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের সব সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। এসব কাজে নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসলে এসডিজি বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ হবে।