আগামী বছর কফি, পশুখাদ্য, তেলবীজসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ডাচ বহুজাতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান রাবোব্যাংক। ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন কিংবা সরবরাহ নয়, বরং দুর্বল চাহিদার কারণেই খাদ্যপণ্যের দাম কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে রাবো ব্যাংক সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, আগামী বছর শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোয় মন্দা দেখার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের ব্যবহার কমবে। তবে দাম কমলেও তা করোনা মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে না।
ব্যাংকটি বলছে, জ্বালানি সংকট, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং গমসহ কিছু পণ্যের তীব্র সংকট বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভোক্তারা সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাতের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে গমের বাজারে। আগামী বছর বিশ্ববাজারে ৬০ লাখ টন গমের সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে রাবোব্যাংক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে শস্যটির উৎপাদন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে।
এদিকে আগামী বছর কফির চাহিদা প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছে রাবোব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের তুলনায় আগামী বছর চাহিদা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে, যা গড় চাহিদা প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাজারে ৪০ লাখ ব্যাগ কফির উদ্বৃত্ত তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে চিনির বাজারদরও আগামী বছর তুলনামূলক কমতে পারে। এক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে পণ্যটির উৎপাদন উপযোগী আবহাওয়া।
রাবোব্যাংকের এগ্রিকালচারাল কমোডিটি মার্কেট রিসার্চের প্রধান কার্লোস মিরা বলেন, লক্ষণীয় মাত্রায় উৎপাদন বাড়ার কারণে নয়, বরং আগামী বছর দুর্বল চাহিদার কারণে বাজার নিম্নমুখী থাকবে। তবে জ্বালানি, শ্রমিক ও অন্যান্য ব্যয় অব্যাহত বাড়ার কারণে মহামারীপূর্ব অবস্থার তুলনায় দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেশিই থাকবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর গত মার্চে বিশ্ববাজারে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রাসংকোচন নীতি গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ রেকর্ড মাত্রায় সুদের হার বাড়ায়। এ পদক্ষেপের পর কমতে শুরু করে খাদ্যপণ্যের দাম। সাত মাস ধরেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম কমেছে। আগামী বছর দাম কমার মাত্রা আরো বাড়বে।
সর্বশেষ গত মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্য দিয়ে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম নয় মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে।
যদিও মূল্যসূচক এখনো সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় বেশ ঊর্ধ্বমুখী। তার ওপর ডলারের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য বিপদ ডেকে আনছে। বিশেষ করে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে এসব দেশ খাদ্য আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর রিজার্ভ সংকট তো রয়েছেই।
এনজে